ওসমানীনগরে দীর্ঘ ১৭ বছরেও হয়নি ছাত্রলীগের কমিটি, তৃণমূলে দ্বন্ধ ও ক্ষোভ

জুবেল আহমেদ, ওসমানীনগর (সিলেট) প্রতিনিধিঃ ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির জন্য দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে অধির আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি গঠন না হওয়ায় পদ পদবী পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। উপজেলা আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের অভ্যন্তরীন কোন্দল এবং কতিপয় সিনিয়র আওয়ামী লীগের নেতার অনিহার কারনে উপজেলায় ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হচ্ছেনা এমন অভিযোগ একাধিক ছাত্রলীগ কর্মীদের।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের হাতে নেই। নিয়ন্ত্রণ করেন আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের সিনিয়র নেতারা। আর সিনিয়র নেতাদের বেশ কয়েকটি গ্রুপ ও উপ-গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপ ও উপ-গ্রুপে এখন কর্মীদের অভাব নেই। এরা ছাত্রলীগের পদবিধারী না হলেও কর্মকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত। এর মধ্যে রয়েছে অনেক অছাত্রও। ২০১৭সালের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ত্রানবিতরনে আসার পর ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের গুঞ্জনে গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত থাকা ছাত্রলীগ নেতারা পদ ভাগিয়ে নিতে জোর লবিং ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নিজেদের অনুগত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পদ পাইয়ে দিতে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের সিনিয়র নেতারাও বিভিন্ন ভাবে লবিং তৎপরতা চালাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি বিহীন থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে তখন কিছুটা চাঙ্গা ভাব দেখা গেলেও এখন পর্যন্ত কমিটি গঠনের কোন উদ্যোগ গ্রহন না করায় সে আমেজেও ভাটা পড়েছে।

ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠন। কিন্তু বিগত দিনে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে স্থানীয় আওয়ামীলীগের সমন্বয়হীনতার অভাবেই ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হয়নি। সম্মেলনের মাধ্যমে সুন্দর পরিবেশে ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়েছেন তৃনমূল ছাত্রলীগ কর্মীরা। ২০১৭ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে আসলে কমিটি গঠনের দাবি জানান ছাত্রলীগ নেতারা। নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। এরই ধারাবাহিকতায় বালাগঞ্জে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা করেন জেলা ছাত্রলীগ। কিন্তু অজানা কারনে সে সময় ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির গঠন করা হয়নি।

জানা যায়, ২০০২ সালে বালাগঞ্জ ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়ে জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন জেলা সভাপতি সফিউল আলম নাদেল ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন সম্মেলনের মাধ্যমে বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগে সিরাজুল ইসলাম তছলুকে সভাপতি ও তুহিন মনসুরকে সাধারণ সম্পাদক ও ওসমানীনগর থানা ছাত্রলীগে ফয়ছল হোসেন সুমনকে সভাপতি ও রিংকু পালকে সাধারণ সম্পাদক করে ১ বছর মেয়াদি পৃথক দুটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। এর পর দীর্ঘ ১৭ বছর অতিবাহিত হলেও ওসমানীনগর ছাত্রলীগের আর কোন কমিটি গঠন করা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় নেতাকমীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। ফলে ছাত্রলীগের অনেক ত্যাগী কর্মীরা আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের দু-গ্রুপে থাকা বিভক্ত নেতাদের অনুসারী হয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ ও স্বেচ্চাসেবকলীগের কতিপয় নেতা ছাত্রলীগের কর্মীদের নিজেদের প্রয়োজনমতো হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে নানা গ্রুপ ও উপগ্রুপের সৃষ্টি করছেন। অভিযোগ রয়েছে সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাত্রলীগকর্মীদেরকে পরস্পর সংঘাতের দিকে টেলে দিচ্ছেন। ছাত্রলীগকর্মীরাও উপজেলা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ন পদে স্থান পাওয়ার আশ্বাসে নেতাদের তল্পীবাহক হয়ে উঠেছেন। ফলে ছাত্রলীগকর্মীদের দলীয় কর্মসূচি ভুলে নেতাদের জন্মদিনের কেককাটা ও সেলফী নিয়ে ব্যস্থ থাকতে দেখা যায়।

ছাত্রলীগ নেতা সোলেমান খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলায় ছাত্রলীগের কমিটি না হওয়ায় পদ প্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপে বিবক্ত হয়ে রয়েছেন। শাহারিয়ার আলম সামাদ ও রায়হান আহমদ জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি দিলেও অজানা কারণে ওসমানীনগরে কমিটি দেননি। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি গঠনের উদ্যোগ না থাকায় প্রকৃত ছাত্রলীগ কর্মীরা নিরবে রয়েছেন। ত্যাগী ছাত্রলীগ নেতারা হারিয়ে যাওয়ায় ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী সেলফিবাজদের কারণেএ উপজেলায় আওয়ামীলীগ অনেকটা দূর্বল অবস্থা রয়েছে।

জেলা ছাত্রলীগ সাবেক উপ-ক্রীড়া সম্পাদক নেতা ইমরান হোসাইন বলেন, ভাই রোগে আক্রান্ত থাকা উপজেলা আওয়ামীলীগের গ্রুপিংয়ের কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলায় ছাত্রলীগ কর্মীরা কমিটি থেকে বঞ্চিত রয়েছে। আওয়ামীলীগসহ ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে ওসমানীনগরে জরুরী ভিত্তিতে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহনের আহব্বান জানান তিনি।

যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবকলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অরুনোদয়ক পাল ঝলক বলেন, আওয়ামীলীগের সমন্বয়ের অভাবে বিগত দিনে ছাত্রলীগের কমিটি হয়নি। বর্তমানে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে গেলেও সিলেট জেলা কমিটি না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছেনা। অত্রঅঞ্চলে আওয়ামীলীগসহ অঙ্গসংগঠনগুলোকে শক্তিশালি করতে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন জরুরী। তাই এবার জেলা ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার সাথে সাথে ওসমানীনগরে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামীলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলু বলেন, আমি দ্বায়িত্বে থাকা কালে সম্মেলনের মাধ্যমে সুষ্টভাবে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের প্রবল ইচ্ছা থাকার পরও নানা কারণে এ উপজেলায় ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এর পর একাধিকবার সিলেট জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হলেও অজানা কারনে জেলা কমিটির দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহন করেননি। আমার দাবী এবার জেলা কমিটি গঠনের পর সম্মেলনের মাধ্যমে সুন্দর পরিবেশে ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হউক।