এক ডেঙ্গু রোগীর পাঁচ দিনের বিল ৫ লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মধ্যেও চিকিৎসা নিয়ে ব্যবসার ফাঁদ পাতার অভিযোগ উঠেছে। কিছু বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনিস্টক সেন্টার এবং ওষুধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উঠেছে এই অভিযোগ। এক ধরনের জিম্মি করে রমরমা বাণিজ্য করছে তারা। প্রয়োজন না থাকলেও অযথা আইসিইউতে রেখেও ব্যবসা চলছে। ওয়ার্ডের বেড ফাঁকা থাকলেও বলা হচ্ছে আইসিইউ ছাড়া সিট খালি নেই।

তবে সম্প্রতি এক ডেঙ্গু রোগীর বিল নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এক ডেঙ্গু রোগীর পাঁচ দিনের বিল করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিলের এই কপি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আরেক ডেঙ্গু রোগীর ২২ ঘণ্টায় চিকিত্সায় বিল ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৪ টাকা। গত ২৬ জুলাই ওই ডেঙ্গু রোগী মারা যান। এটা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হলেও নীরব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর?

হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টরা জানান, ডেঙ্গু জ্বরের চিকিত্সায় হাসপাতালে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের বেশি থাকতে হয় না? বেসরকারি হাসপাতালে কেবিনে সব মিলিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকার বেশি চিকিত্সা খরচ হওয়া উচিত না? এদিকে ডেঙ্গু পরীক্ষা ফি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও মানছে না ঢাকার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল। দ্বিগুণের বেশি অর্থ আদায় করা হচ্ছে। ৫০০ টাকার পরীক্ষা ফি কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতাল ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। আবার পরীক্ষা না করেও রিপোর্ট দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে?

শুধু তাই নয়, বাজারে স্যালাইন সঙ্কট তৈরি হওয়ায় এটা নিয়েও ব্যবসা করা হচ্ছে? এদিকে প্রয়োজন না থাকলেও সরকারি হাসপাতালে সিট নেই উল্লেখ করে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন এক শ্রেণির চিকিত্সক। ফলে হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে যাওয়া ডেঙ্গু রোগীরা এখন আইসিইউ আতঙ্কে ভুগছেন।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, কেন, কী কারণে রোগীকে আইসিইউতে নেওয়া হলো—চিকিত্সকরা তা স্পষ্ট করছেন না। কিন্তু হাসপাতাল ছাড়ার সময় তাদের মোটা অঙ্কের বিল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক গরিব রোগী এ ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। রোগীর স্বজনরা বলেন, করার কিছু নেই। সরকারি হাসপাতালে সিট খালি নেই। জীবন বাঁচাতে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। তারা যে বিল ধরিয়ে দিচ্ছে তা দিতে বাধ্য হচ্ছি।

এদিকে বেসরকারি হাসপাতালের বেড, কেবিন ভাড়া ও চিকিত্সক ফি’র ব্যাপারে কোনো নীতিমালা নেই? ফলে ইচ্ছামতো ভাড়া বৃদ্ধি করা হচ্ছে? কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সকের ভিজিটিং ফি দিতে হয় তিন হাজার টাকা।

বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন একজন নামিদামি ব্যবসায়ী বলেন, ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে বুধবার রাতে ধানমণ্ডি এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন একজন অধ্যাপকের অধীনে। অথচ গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত তিনি এ রোগীকে দেখতে আসেননি। তবে তার প্রতিদিনের রোগী দেখার ভিজিটের টাকা খরচে উল্লেখ করা আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনিটরিং টিমও এ ব্যাপারে নির্বাক।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন ২৫ হাজার ৮৭২ জন। বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন ৮ হাজার ৭৭৬ জন রোগী। পয়লা জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৯ জন।

কন্ট্রোল রুমের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট ২ হাজার ৩২৬ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া, ঢাকার ৪০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ১৪০ জন।