‘একটি প্রেমের অপমৃত্যু’ উপন্যাসের লেখক প্রফেসর লুৎফর রহমান আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের সহকারি অধ‍্যাপক, “একটি প্রেমের অপমৃত‍্যু” উপন‍্যাসের লেখক লুৎফর রহমান আর নেই। তিনি স্থায়ীভাবে চুয়াডাঙ্গা শহরের সদর হাসপাতাল পাড়ায় বসবাস করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলার ধান‍্যঘরা গ্রামে।

প্রফেসর লুৎফর রহমানের মৃত‍্যুতে এক ফেসবুক প্রতিক্রিয়ায় সাংস্কৃতিক ব‍্যক্তিত্ব কাজল মাহমুদ লিখেছেন, “প্রতিদিনের মতো গতকাল সকালে হাঁটার সময় ব্যাংকার হারুন ভাইয়ের সাথে দেখা ঈদগাহ সড়কে। অগ্রজের খোঁজখবর নেয়ার সময় আদ্রকণ্ঠে বললেন, “ভাইয়ের বাঁচার আশা খুবই কম। চিকিৎসকরা আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আল্লাহ্ ভরসা, আপনারা দোয়া করবেন।”

দিন না ঘুরতেই আজ সকালে হাঁটার সময় দুঃসংবাদ।ইতোপূ্র্বে প্রবীণ হিতৈষী সংঘের দু’একজন তাঁর সুস্থ হয়ে ফিরে আসার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। সেই আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হলো!

লুৎফর স্যারের মতো নিরহঙ্কার, নির্লোভ, সৎ, কাজপাগল মানুষ আমি কমই দেখেছি। যখন তাঁর সাথে চাক্ষুষ পরিচয়, তখন তিনি কৃষক সমিতির একনিষ্ঠ কর্মী, কমিউনিস্ট পার্টির বিশেষ শাখা’র সদস্য (অপ্রকাশ্য গোপন সদস্য)। তখনও জানতাম না তিনি দর্শনা কলেজের সেই ছাত্র যিনি ‘একটি প্রেমের অপমৃত্যু’ উপন্যাসের লেখক। উপন্যাসটি একদা আমার সংগ্রহে ছিলো, কী কারণে যেন এখন আমার কাছে নেই। আমার কাছে না থাকাটা স্বাভাবিক হয়তো, কিন্তু লেখক হিসেবে একটি কপিও তিনি সংরক্ষণ করেননি। এমনই কিছু জাগতিক বিষয়ে তিনি উদাসীন, ক্ষেত্রবিশেষে ছন্নছাড়াও ছিলেন। তাঁর ‘চলমান জীবন’, ‘প্রত্যাবর্তন’, ‘একাত্তরের ঝড়’ উপন্যাসের অক্ষর বিন্যাসের কাজ (কম্পিউটার কম্পোজ) করেছি আমি। প্রিন্টার্স লাইনে নাম থাকার সুবাদে সৌজন্যবশত গ্রন্থ উপহার দিয়েও পরে অনুরোধ করে চেয়ে নিয়েছেন শেষকপি হিসেবে নিজের কপি হিসেবে সংরক্ষণের জন্য। এমনই গ্রন্থ প্রকাশের পাগলামি ছিলো তাঁর।

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব‍্যাক্তিত্ব কাজল মাহমুদ

পাগলামির কথা যখন উঠলোই তখন শফি চাচা, রিজভী ভাই, মোখতার স্যারের ‘দশচক্রে ভগবান ভূত’ হয়ে কী পাগলামি না করেছেন তিনি এ্যালবার্ড বিশ্বাসের জুগীরগোফায়! বিবাহপূর্ব জীবনে প্রতি সপ্তাহে রূপছায়া ও নান্টুরাজ প্রেক্ষাগৃহে ছায়াছবি দেখার পাগলামো যেমন ছিলো, তেমনই বাইপাস সার্জারী-পূর্বকালে প্রায় প্রতি শুক্রবার বা ছুটির দিনে চলে যেতেন প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে, নিজ গ্রামে জন্মভূমে। এটাকে কী পাগলামো বলা যায়, যেখানে নিস্বর্গের কোলে তিনি সমাহিত হতে চেয়েছেন?

শিক্ষক আন্দোলনে তিনি ছিলেন প্রথম সারির কর্মী ও নেতা। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের পরপরই তিনি প্রতিটি সভায় লিখিতভাবে প্রতিটি কর্মীর কাছে হিসাব-নিকাশের কপি পৌঁছিয়ে ব্যাখ্যা। অথচ কে না জানতো যে এসব খরচের বেশিরভাগই শিক্ষকদের চাঁদা ছাড়া তাঁর নিজ পকেটের। পাগল ছাড়া সংগঠনের প্রতি এত দরদ কি হতে পারে?

আজ থেকে দু’ যুগেরও বেশি সময় আগে থেকেই কপর্দকশূন্য তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন বৃদ্ধাশ্রম গড়ার। ওয়াসিকুর রহমান জোয়ার্দ্দার বেলাল ভাইসহ আরো কয়েকজনকে তিনি প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন এ বিষয়ে। তেমন সাড়া না মিললেও তিনি হতোদ্যম হননি। তাঁর স্বপ্নকে তিনি বাস্তবায়ন করেছেন হাতে গোনা দু’একজন বিশ্বস্ত সহকর্মী নিয়ে। “প্রবীণ হিতৈষী সংস্থা’র গিয়েছি অনেকবার, বিভিন্ন কর্মোপলক্ষে এর সদস্য না হয়েও। বিগত দিনের অন্যান্য কাজের চেয়ে এ প্রতিষ্ঠানটির কাজে তিনি অনেক গোছালো, সুপরিকল্পিত। আর তিন বছর পরেই হয়তো এর সদস্য হবো আমি। কিন্তু তাঁর সাথে কাজ করা আর হবে না। এখন তাঁর অনুপস্থিতিতে এ সংগঠনটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করাই হবে তাঁর প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা প্রদর্শন।

অনেক কথাই লেখার ছিলো। মনেও পড়ছে সব এক এক করে। বেশি মনে পড়ছে শিক্ষক আন্দোলনে তাঁর সাথে মাঝে মাঝে আমার বিতর্কের কথা। মৃত্যুর পূর্বে আমার সাথে তাঁর দ্বিমতের কথা তিনি মনে রাখেননি নিশ্চয়ই।”

সুত্র: বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব‍্যাক্তিত্ব কাজল মাহমুদ এর ফেসবুক স্ট‍্যাটাস থেকে।