ঈদের নতুন জামা গায়ে লাশ হলো শিশু জান্নাত

নাজমুল হোসেন বিজয়, বরগুনা জেলা প্রতিনিধিঃ
বরগুনা সকালে মায়ের সাথে ঈদের নামাজ আদায় করে চার বছরের শিশু জান্নাত। পরিবারের সবার সঙ্গে সেমাই-ফিরনি খেয়ে সাজ-সজ্জায় মাতে শিশুটি। বাবার পাঠানো নতুন শার্ট ও হাফপ্যান্ট পরে ছেলে সেজেছিল জান্নাত। সকালে নাশতা খেয়ে পরিবারের সাথে পাশের গ্রামের এক আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে যাবে শিশুটি।

স্বজনরা ভাড়া করে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান। ভ্যানটির পেছনে জান্নাত ও তার মা বসে। বাড়ি থেকে রওনা হওয়ার একটু পরেই একটি ইজিবাইক ধাক্কা দেয় তাদের বহন করা ভ্যানটিকে। পেছন থেকে ছিটকে পড়ে শিশু জান্নাত ও তার মা। পিচঢালা তপ্ত সড়কে মাথায় আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই শিশুটি মারা যায়। তার মা ওই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। তিনি এখনও জানেন না তার শিশুটি বেঁচে আছেন কি-না। তিনিও গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের বেডে কাতরাচ্ছেন।

এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে কাল শুক্রবার (১৪ মে) ঈদের দিন বেলা ১১টার দিকে। বরগুনার বামনা উপজেলার বামনা-পাথরঘাটা মহাসড়কের আলম দরবেশের বাড়ির সামনে ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশু জান্নাত (৪)। এই দুর্ঘটনায় তার মা মোসা. ফারজানা বেগম (২৮) গুরুতর আহত হয়। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছে। বামনা থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষে এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। ভ্যান ও ইজিবাইকচালক পলাতক।

নিহত শিশু জান্নাতের দাদা মো. এমাদুল ভূইয়া জানান, সকালে নাশতা খেয়ে তার নাতি জান্নাত ওর মা সহ বাড়ির আরো কয়েকজনের সাথে রুহিতা গ্রামের তাদের এক আত্মীয়দের বাড়িতে রওনা হয়। তারা একটি ভ্যান ভাড়া করে। ওই ভ্যানের সামনে দুজন বসে। পেছনে জান্নাত ও তার মা বসে। বাড়ি থেকে কিছুদূরে ভ্যানটি পৌঁছলে সামনে থেকে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসা একটি ইজিবাইক ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে নাতি ও তার মা ছিটকে সড়কে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই শিশুটি মারা যায়। শিশুটির মায়ের মাথা প্রচণ্ড আঘাতে ফেটে যায়।

পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা শিশুটি ও তার মাকে বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, দুই চালক বর্তমানে পলাতক। এঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত শিশুটির পরিবার কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ থাকলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে।