ইতিহাসের পাতায় ৯ মার্চ, ১৯৭১: ট্রেন থামিয়ে, চুল্লিতে ফেলে শত শত মানুষকে হত্যা

বিশেষ প্রতিনিধি : রেলওয়ে জেলা হিসাবে খ্যাত সৈয়দপুরে মহান মুক্তিযুদ্ধে দুটি গণহত্যা পরিচালিত হয়। পাকিস্তানি আর্মি ও স্থানীয় অবাঙালিদের সহায়তায় এই গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের ১৪ ১৫ ও ১৬ তারিখে বাঙালিদের ধরে ধরে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ফার্নেস চুল্লিতে কয়েকশ’ মানুষকে পুড়িয়ে ছাই করা হয়। আর ১৩ জুন ভারতে নিয়ে যাবার কথা বলে ট্রেনের বগিতে করে নিয়ে নারী ও শিশুসহ প্রায় সাড়ে চারশ মানুষকে রামদা ছোরা দিয়ে কেটে হত্যা করা হয়।

‘অপারেশন খরচাখাতা’:অবরুদ্ধ শহরে মাইকে যখন ঘোষণাটি শুনলেন শ্যামলাল আগরওয়াল, তখন মৃত্যুর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা জীবনে যেন বেঁচে থাকার আলো দেখতে পেলেন। ১৯৭১ সালের ১৩ জুন সকালে সৈয়দপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে চারটি বগি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনটি যেন বেঁচে যাবার আনন্দ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক শ্যামলাল আগরওয়াল তখন সৈয়দপুর বিমানবন্দরে মাটি ভরাটের কাজ করছিলেন। পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ থেকে মাইকে দেওয়া সে ঘোষণায় বলা হচ্ছিল, সৈয়দপুর শহরে যে ক’জন হিন্দু মাড়োয়ারি আটকা পড়ে আছেন, তাঁদের নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ জন্য একটা বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেনটি সৈয়দপুর রেলস্টেশন থেকে ভারতের শিলিগুড়িতে যাবে।

ভারতের বিহার থেকে আসা উদ্বাস্তুদের প্রবল প্রতিপত্তি তখন সৈয়দপুর শহরে। সাধারণভাবে মানুষ বলে ‘বিহারী’। রাজাকার আলবদরদের মতো মুক্তিযুদ্ধের সময় এদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সারাদেশে যখন মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলাদের চোরগোপ্তা আক্রমণ শুরু হয়েছে তখন নীলফামারি জেলার সৈয়দপুর পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

অবরুদ্ধ হিন্দু, মাড়োয়ারিদের নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ১৩ জুন সকালে তাদের সৈয়দপুর রেলস্টেশনে একত্র করা হয়। এরপর স্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে গোলাহাট এলাকায় ওই ট্রেনটি দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এরপর ট্রেনের দরজা-জানালা বন্ধ করে দেয় পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর রাজাকার আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। ট্রেনের বগিতে আটকা থাকা অবস্থায় এক এক করে নারী, পুরুষ ও শিশুদের বের করে তলোয়ার ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। কোলের শিশুও এদিন তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। ওই হত্যাকাণ্ডে ৪৪৮ জন মানুষকে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাযজ্ঞ থেকে কয়েকজন পালিয়ে নিজেদের রক্ষা করেছিলেন। তারাই ওই ইতিহাসের সাক্ষী। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই গণহত্যার নাম রেখেছিল ‘অপারেশন খরচাখাতা’, তবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তা ‘গোলাহাট গণহত্যা’ নামে পরিচিত।

সেদিন বেঁচে যাওয়া তপন চন্দ্র দাস ওরফে কালঠু দাস বর্তমানে জরিবুটির দোকান করেছেন সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডটি ঘটানোর ১৫ দিন আগে বাঙালি তরুণ-যুবকদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টের টর্চার সেলে। ছোট্ট ছোট্ট ঘরে ১৪/২০ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছিল। আর চলতো নির্যাতন। ১৩ জুন সকালে পাক সেনারা জানান, তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। সরল বিশ্বাসে তারা আগে থেকে রাখা দুটি গাড়িতে চেপে বসলেন। গাড়িতো আর বাসার দিকে যাচ্ছে না। নেওয়া হচ্ছে স্টেশনের দিকে। সেখানে আগে থেকেই চারটি বগি তৈরি ছিল। দুটি বগিতে তোলা হলো তরুণ-যুবকদের আর দুটি বগিতে বাচ্চা ও মেয়েদের। আগেই আটক যুবকদের মাধ্যমে পরিবারের লোকজনকে ডেকে নেওয়া হয়। ট্রেনের দরজায় রাইফেল নিয়ে পাহারায় পাক সেনারা।

শ্যামলাল আগরওয়াল বর্ণনা করছিলেন ওই দিনের স্মৃতি। সকাল ১০টার দিকে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় ট্রেনটি। চলছিল ধীরে ধীরে। শহর থেকে বেরিয়ে রেলওয়ে কারখানা পেরিয়েই হঠাত্ থেমে যায় ট্রেন। জায়গাটা স্টেশন থেকে দুই-তিন মাইল দূরে। নাম গোলাহাট। বন্ধ জানালা একটু ফাঁক করতেই তার আত্মা কেঁপে ওঠে। বাইরে সারি সারি সেনা। সঙ্গে তাদের দোসর বিহারীরা। সেনাসদস্যদের হাতে রাইফেল। আর বিহারীদের হাতে চকচক করছিল ধারালো রামদা।

তপন চন্দ্র দাস বলেন, ‘থেমে থাকা ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে ঢুকেই চিত্কার করে পাকিস্তানি সেনারা উর্দুতে বলতে থাকেন, একজন একজন করে নেমে আসো। তোমাদের মারতে এসেছি আমরা। তবে পাকিস্তানের দামি গুলি খরচ করা হবে না। সকলকে এক কোপে বলি দেওয়া হবে। শুরু হয়ে যায় বেপরোয়া হত্যাযজ্ঞ। ওই হত্যাযজ্ঞে শিশু, বৃদ্ধ, নারীরাও রেহাই পায়নি। অল্প যে ক’জন পালিয়ে প্রাণে বাঁচতে পেরেছিলেন পরে তাদের অনেকেই ভারতে চলে যান।’

অর্থাভাবে আটকে আছে গোলাহাট বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ: স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও সৈয়দপুরে গোলাহাট বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শেষ হয়নি। দীর্ঘদিন অরক্ষিত পড়ে থাকার পর সাবেক সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় হুইপ শওকত চৌধুরী ওই বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। বিগত পাঁচ বছরে বধ্যভূমিটিতে একটি স্মৃতিস্মারক নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পটি শেষ করতে আরো ৩৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শহীদ সন্তান নিজু কুমার আগরওয়ালা। অর্থ সংকটের কারণে প্রকল্পটি দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়িত হয়নি বলে তিনি জানান। সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন জানান, গোলাহাট বধ্যভূমি আজও অবহেলিত। আগামী প্রজন্মের জন্য এর ইতিহাস তুলে ধরা উচিত।

রেলওয়ে কারখানার চুল্লিতে নৃশংস গণহত্যা:এর আগে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার লোহা গলানোর চুল্লিতে (কিউপেল ফার্নেস) পুড়িয়ে হত্যা করা হয় অসংখ্য বাঙালিকে। সেময় রেলওয়ে কারখানায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে কাজ করতেন নূরুজ্জামান জোয়ার্দার। তিনি হত্যাকাণ্ডগুলো সরাসরি না দেখলেও রেলওয়ে কারখানার ইয়ার্ড পরিষ্কারের সময় অনেক মাথার খুলি দেখতে পান। তিনি বলেন, বাঙালিদের এই রেল কারখানায় নির্যাতন করে লোহা গলানোর চুল্লিতে পুড়িয়ে মারা হয়। বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৭১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ এপ্রিল। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে ১৭৭ জনের তালিকা সংগ্রহ করে যারা দেশের জন্য শহীদ হন। সেসব শহীদের তালিকা সৈয়দপুর রেলওয়ে শিশুপার্কে স্মৃতিফলকে খোদাই করে রাখা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় বাঙালিরা কর্মস্থলে যোগদান বন্ধ করে দেন। ওদিকে সৈয়দপুরের অবাঙালিরা সম্পূর্ণভাবে সংগঠিত হয়ে সৈয়দপুর সেনানিবাসে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গোপনে প্রশিক্ষণ নিতে থাকে। সৈয়দপুরের বিশাল রেলওয়ে কারখানায় অবাঙালিরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। অবাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একত্রিত হয়ে রেলওয়ে কারখানা ও আশপাশের বাঙালিদের ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ অবাঙালিরা সৈয়দপুরের বাঙালিদের অবরুদ্ধ করে ফেলে। এই ঘটনা অতি দ্রুত সৈয়দপুর ও এর আশপাশের গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এবং অবরুদ্ধ বাঙালিদের ওপর নির্যাতনের খবর মাইকের মাধ্যমে আশপাশের গ্রামগুলোতে জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময়ে সৈয়দপুরের একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন মাহতাব বেগ। তিনি আশপাশের গ্রাম থেকে হাজার পাঁচেক লোক নিয়ে যার হাতে যা ছিল তাই নিয়ে রওনা হন অবরুদ্ধ বাঙালিদের জীবন বাঁচানোর জন্য। অগ্রসরমান মিছিল রোধ করার জন্য সৈয়দপুরের কাছে অবাঙালি ও পাকিস্তানি সৈন্যরা শেরে বাংলা স্কুলে জড়ো হয়। সেখান থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা বাঙালিদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। গুলি বর্ষণে মাহতাব বেগ তলপেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন এবং তার পাশে অবস্থানরত সাতনলা ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। তাদের পাশে ছিলেন মাহতাব বেগের সন্তান মির্জা সালাউদ্দিন বেগ, তিনিও গুলিতে আহত হন। সেই সময়ে অবাঙালিরা গুলিবিদ্ধ মাহতাব বেগকে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে এবং তিনি শহীদ হন। অবাঙালিরা তার লাশ সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। ইতোমধ্যে পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঁশি বাজিয়ে অবাঙালিদেরকে স্থান ত্যাগ করার সংকেত দেয়। অবাঙালিরা মাহতাব বেগের লাশ সৈয়দপুর শহরে নিয়ে প্রকাশ্যে দেহ থেকে মস্তিষ্ক বিচ্ছিন্ন করে আনন্দ মিছিল করে শহর প্রদক্ষিণ করে। তারা মিছিলে স্লোগান দিতে থাকে যে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কথা বললে সবারই একই পরিণতি বরণ করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ২৩ মার্চের ঘটনার পর অবাঙালিরা নিরীহ বাঙালিদের ওপর তাদের অত্যাচার চালিয়ে যেতে থাকে। সারা দেশে ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চ লাইটের পর ২৬ মার্চ সৈয়দপুরের সন্ত্রস্ত বাঙালিরা বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন না। ২৬ মার্চ বিকালে অবাঙালিরা রেলওয়ে কলোনি এলাকায় মাইকে ঘোষণা দেয় যে ২৭ মার্চ সকালে সকল বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে যোগদান করতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২৭ মার্চ সকালে বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রাণভয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে কর্মস্থলে উপস্থিত হন।

সেদিন রেলওয়ের কারখানার গেটের সামনেই অবাঙালিরা স্টোর ও অ্যাকাউন্টস অফিসার এম এ আজিজের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে। স্বাধীনতাকামী এম এ আজিজ ছিলেন একজন এলএমএফ ডাক্তার এবং তিনি সৈয়দপুর এলাকায় জনপ্রিয় ছিলেন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তিনি শহীদ হন। তারপর অবাঙালিরা ওয়ার্কশপের আরও ৫ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে।

এই ঘটনার পর থেকে অবাঙালিরা তাদের অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। ১৯৭১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ এপ্রিল রেলওয়ে কারখানায় সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘটিত হয়। ৩ দিনে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সৈয়দপুর শহরের সাধারণ মানুষ এবং সেইসঙ্গে গ্রামের ৩৫০ জন নিরীহ মানুষকে ধরে এনে কারখানার ভিতরে হত্যা করা হয়। নরপশুরা এই গণহত্যা সংঘটিত করার জন্য অভিনব এক পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল। রেলওয়ে কারখানার ৩টি বিশাল আকারের বয়লার ও ফার্নেসের মধ্যে হতভাগ্য মানুষদেরকে নিক্ষেপ করা হয়। উল্লেখ্য, বয়লার ও ফার্নেস লোহা গলানোর কাজে ব্যবহূত হয়। ফার্নেসের মধ্যে মানুষের দেহ পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং তাদের দেহাবশেষের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তিন দিনের গণহত্যার নেতৃত্ব দেয় অবাঙালি মতিন হাশমী, মো. হব্বু, মো. জাহিদ ও রেলওয়ের আরও অনেক অবাঙালি কর্মচারী। বর্বরোচিত এই গণহত্যার সময় নিরীহ ও নিরপরাধ বাঙালিরা সেদিন চিত্কার করে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন কিন্তু অবাঙালিরা তাদের কাকুতি-মিনতির পরোয়া করেনি।

সৈয়দপুরে সে সময়ের গণহত্যা প্রসঙ্গে খন্দকার আসাদুর রহমান জানান, তার বাবা খন্দকার হুসনুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সৈয়দপুরে অবাঙালিদের হাতে নিহত হন। তিনি জানান, সৈয়দপুরে মুন্সীপাড়ায় ছিল আমাদের বাসা। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আমাদের পরিবার সৈয়দপুর শহর থেকে গ্রামে চলে আসে। শুধু বাবা থেকে যান। তিনি তখন সৈয়দপুরে রেলওয়েতে চাকরি করতেন। বাবাকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি আসেননি। বলেছিলেন, এ শহরে আমাকে কেউ হত্যা করবে না। তখন সৈয়দপুর শহরজুড়ে বাঙালি ও অবাঙালিদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ১৩ এপ্রিল আমার বাবা নিখোঁজ হন। পরে অবাঙালিদের হাতে নিহত হন। তার লাশও আমরা খুঁজে পাইনি। স্বভাবতই বিহারীদের ওপর ঘৃণা ছিল। কিন্তু পরে জানতে পেরেছি সেই উত্তেজনাকর সময় বাবাকে বাঁচাতে দুদিন ঘরের একটি আলমারীতে লুকিয়ে রেখেছিল একটি বিহারী পরিবারই।

সৈয়দপুর রেলওয়ে শহীদ মিনারে ১৭৭ জন শহীদের নাম লিপিবদ্ধ আছে। তাদের মধ্যে অনেককেই রেলওয়ে কারখানায় হত্যা করা হয়েছিল। গণহত্যার শিকার অনেক শহীদ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বহিরাগতদের নাম জানা যায়নি। তবে জনশ্রুতি রয়েছে যে ওই ৩ দিনে প্রায় ৩ শতাধিক মানুষকে বয়লার ও ফার্নেসের মধ্যে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়।

সুত্র : ইত্তেফাক