যে সকল মন্ত্রীরা শেখ হাসিনার কাঠগড়ায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

সদ্যসমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদের ৮ ধাপের নির্বাচনের পর দেখা যাচ্ছে যে, ১৫ মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ভরাডুবি ঘটেছে। এই ভরাডুবির কারণ কি এবং এই ভরাডুবির পেছনে মন্ত্রীদের কোন ভূমিকা ছিল কিনা, এ ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে কারণ জানতে চাওয়া হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে ১৫ জন মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় এই ভরাডুবির ঘটনাগুলো ঘটেছে তাদের মধ্যে রয়েছে:

১. মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হোসেন: আ ক ম মোজাম্মেল হোসেন কালিয়াকৈর উপজেলা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসনের এমপি। তার নির্বাচনী আসনে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে মাত্র দুটিতে নৌকা বিজয়ী হয়, বাকি ৬টিতে নৌকা প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে।

২. পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান: পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, শান্তিগঞ্জ এবং জগন্নাথপুর উপজেলা নিয়ে তার এই আসন। তার নির্বাচনী এলাকায় ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৪টিতে নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। অন্য ১১টিতে নৌকা প্রার্থী পরাজিত হয়েছে।

৩. প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ: সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলা নিয়ে সিলেট-৪ আসনের এমপি। এই তিন উপজেলায় মোট ১৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে ৯টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে, ১০টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হয়েছে।

৪. বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি: বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নির্বাচনী আসন রংপুর-৪। এই আসনটি পীরগাছা এবং কাউনিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই দুই উপজেলায় মোট ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে ৭টিতে জিতেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা, বাকি ৮টিতে নৌকার ভরাডুবি ঘটেছে।

৫. পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন: বড়লেখা এবং জুড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। দুই উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে মাত্র ৬টিতে নৌকা বিজয়ী হয়েছে, বাকি ৯টিতে নৌকা প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন।

৬. সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের: সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট নিয়ে গঠিত নোয়াখালী-৫ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি একাধারে সড়ক পরিবহনমন্ত্রীও বটে। তার নির্বাচনী এলাকায় কোম্পানীগঞ্জের মোট ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এখানে আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। ৮টি ইউনিয়নের ৭টিতে সরকার দলীয় প্রার্থী জয়ী হয়েছে, একমাত্র ৪ পার্বতী ইউনিয়নে জামায়াতের মোহাম্মদ হানিফ নির্বাচন নির্বাচিত হন। এর আগে চতুর্থ ধাপে কবিরহাটে ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়। এরমধ্যে ৫টিতে নৌকাপ্রার্থী জিতেছেন, বাকি দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যান হয়েছেন। দুজনই আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন।

৭. অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি। সদর দক্ষিণ লালমাই এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে গঠিত তার এই আসন। তাঁর নির্বাচনী আসনে ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৯টিতে আওয়ামী লীগ জিতেছে, বাকি ৪টিতে নৌকার প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে।

৮. পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন সিলেট-১ আসনের এমপি। সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত তার এই আসন। এই আসনে সিলেট সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ভোট হয়। ওই ভোটে চারটির মধ্যে দুটিতে নৌকা পরাজিত হয়েছে।

৯. শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন: শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন নরসিংদী-৪ আসনের এমপি। মনোহরদি এবং বেলাব উপজেলা নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকা। তার নির্বাচনী এলাকার মধ্যে মোট ৯ টিতে ভোট হয়। যেখানে চারটিতেই নৌকা পরাজিত হয়েছে।

১০. বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী: বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি। তার নির্বাচনী এলাকার মধ্যে রূপগঞ্জ উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হয়। এর মধ্যে চারটিতে নৌকা এবং একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। চারজন চেয়ারম্যানের তিনজনই চেয়ারম্যানই বিনা প্রতিদন্ধিতায় নির্বাচিত হন। একমাত্র স্বতন্ত্রভাবে বিজয়ী হয়েছেন ভোলাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

১১. স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক: স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মানিকগঞ্জ-৩ আসনের এমপি। তার সদর এবং সাটুরিয়া উপজেলা নিয়ে নির্বাচনী এলাকা। এই নির্বাচনী এলাকার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১১টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতেছেন। বাকি পাঁচটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন।

১২. খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার: খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নওগাঁ-১ আসন থেকে এমপি। তার নির্বাচনী এলাকার ২০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টিতে নৌকা জিতেছে। বাকি দুইটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছে।

১৩. সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ: সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য। তার নির্বাচনী এলাকায় ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৯টিতে নৌকা প্রতীক জিতেছেন। বাকি ৭টিতে নৌকা প্রতীক পরাজিত হয়েছে।

১৪. পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বান্দরবান, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার সংসদ সদস্য। তার নির্বাচনী এলাকায় ২৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়। যার মধ্যে আওয়ামী লীগ হেরেছে ৭টিতে।

১৫. রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন: পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তার নির্বাচনী এলাকায় ২০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ১৪টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়, বাকি ৬টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হয়েছে।

যে সমস্ত মন্ত্রীদের নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে সেই পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানের জন্য মন্ত্রীদের কাছে জানতে চাওয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।‎