আ. লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলী: শাস্তি না সান্ত্বনা?

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা এখন ৩৯। কিন্তু এই বিরাট বহরের উপদেষ্টা মণ্ডলীর কাজ কী? আর উপদেষ্টা মণ্ডলীতে ঠাই পাওয়ার যোগ্যতাই বা কী? এই উপদেষ্টা মণ্ডলীতে নানা ধরণের মানুষজনের সমাগম। দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিবীদরা যেমন এখানে আছেন, তেমনি আছেন বিভিন্ন পেশাজীবীরা। আবার চমকে দেয়ার মতো ব্যক্তিও লক্ষ্য করা যাবে উপদেষ্টা মণ্ডলীতে।

আমীর হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদের মতো জাঁদরেল হেভিওয়েট নেতাদের সঙ্গে আলহাজ্ব মকবুল হোসেন বা মুকুল বোস কতটা মানানসই, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। উপদেষ্টা পরিষদের একটি বড় অংশ হলো পেশাজীবী বিভিন্ন শ্রেণী পেশায় স্বনামখ্যাত ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে এই উপদেষ্টা মণ্ডলীতে যেমন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, ড. অনুপম সেন, অধ্যাপক হোসেন মনসুর প্রমুখ। আছেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত জমিরের মতো কূটনীতিক, রশীদুল আলমের মতো সাবেক আমলারাও। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে মেজর জেনারেল (অব:) তারেক সিদ্দিকী ছাড়া বাকী সবাই আছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীতে। এরা সবাই সাবেক আমলা, ড. গওহর রিজভী শুধু আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষক। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর ধারণাটি এসেছিল মূলতঃ বিভিন্ন শ্রেণী পেশায় প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণের লক্ষ্যেই। স্ব স্ব ক্ষেত্র যারা আলোকিত করেছিল, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেন, তারা যেন দলের জন্য অবদান রাখতে পারেন, সেরকম একটি বিবেচনা থেকেই উপদেষ্টা মণ্ডলীর উৎপত্তি হয়। প্রথম দিকে বিষয়টি এ রকমই ছিলো। কিন্তু ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগের ‘উপদেষ্টা মণ্ডলী’ স্থানটি নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওয়ান ইলেভেনের ঝাঞ্চা কাটিয়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় পায়। ওয়ান ইলেভেন আওয়ামী রাজনীতিতে ‘সংস্কারপন্থী’ শব্দটি চালু করে। আওয়ামী লীগে ‘সংস্কারপন্থী’ শব্দটি রাজাকারের মতোই ঘৃণ্য। ২০০৮ এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি সংস্কারপন্থী অনেককে যেমন অধ্যাপক আবু সাঈয়ীদ, খ.ম. জাহাঙ্গীর, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মাহমুদুর রহমান মান্না-এদের মনোনয়ন বঞ্চিত রাখেন। হেভিওয়েট ৪ সংস্কারপন্থী মনোনয়ন পেলেও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হননি। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে প্রেসিডিয়াম থেকে ছিটকে ফেলে দেয়া হয় ৪ হেভিওয়েটকে। এদের আশ্রয় কেন্দ্র হয় উপদেষ্টা মণ্ডলীতে। ৪ হেভিওয়েটের দুজনই এখন নেই। বাকী দুজন নানা বর্ণের ৩৯ জনের সঙ্গে চাপাচাপি করে এখনো উপদেষ্টা মণ্ডলীতে আছেন। এর মধ্যে উপদেষ্টা মণ্ডলী আর শ্রেণী পেশার গুণীজনের পরামর্শ দেয়ার প্লাটফর্ম থাকেনি। এটা হয়ে যায় সান্ত্বনা পুরস্কার। মুকুল বোস ওয়ান ইলেভেনে ‘ভুল’ করেছে, এখন ‘দুঃখিত’ ‘লজ্জিত’। দল করতে চান। এলেন উপদেষ্টা মণ্ডলীতে। আলহাজ্ব মকবুল হোসেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে মরতে চান, চলে এলেন উপদেষ্টা মণ্ডলীতে। মোজাফফর হোসেন পল্টু শেষ বয়সে কী করবেন? উপদেষ্টা মণ্ডলীতে স্বাগতম। উপদেষ্টা মণ্ডলী যেন এক রাস্তায় বিএমডাব্লিউ, সিএনজি, বাস, রিক্সা সব কিছুর সমাহার।

এতোদিন এ নিয়ে কথা হয়নি তেমন। কারণ হেভিওয়েটরা মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রিত্ব থাকলে উপদেষ্টা মণ্ডলীতে ‘কুলীন’দের সঙ্গে বসায় তাদের আপত্তিও ছিলো না খুব একটা। কিন্তু এখন যে তাদের একমাত্র পরিচয় উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য। তাই বিষয়টা এখন বেশ চোখে পড়ছে, দৃষ্টিকটু লাগছে। এ থেকে মুক্তির আবেদনও করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু সেজন্য তো অপেক্ষা করতে হচ্ছে আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত।