আশুলিয়া ঝুট ব‍্যবসাকে কেন্দ্র করে ইউপি সদস্য ও যুবলীগ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ

সাভার প্রতিনিধি:আশুলিয়ায় ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে (ইউপি) সদস্য ও স্থানীয় যুবলীগ কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় এলাকার একটি মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত পড়ার’ ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে জড়ো করার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন, ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কিছু মোটরসাইকেল। আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকায় মঙ্গবার সকাল ৯টার দিকে এই সংঘর্ষ হয় বলে জানান আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম। তিনি বলেন, ঝুট ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির হোসেন সরকার ও স্থানীয় ইউপি সদস্য সাদেক ভূঁইয়ার মধ্যে বিরোধ ছিল। এর জেরে সকালে তাদের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে গোলাগুলির অভিযোগ উঠেছে।
আহতদের ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই বলে জানান জিয়াউল। সংঘর্ষের পর ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য সাদেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। কথা বলা গেছে যুবলীগ নেতা কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ইপিজেডের এক্সপেরিয়েন্স ফ্যাক্টরিতে আমার বৈধ ব্যবসা করি । কাইলকাও আমার ফ্যাক্টরির লেবার বাইর কইরা দিছে ওর (ইউপি সদস্যের) ছেলে। ‘আইজ সকালে আমার ম্যানেজার ৮-১০ জন পোলাপান নিয়া ফ্যাক্টরিতে ভাদাইলের রাস্তা দিয়া রপ্তানি যাইবার লইছিল। পিছন দিক দিয়া ওরা হামলা করছে। দুইজনকে কুপায় আহত করছে। তারা নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি আছে।’

Displaying received_352266592586733.jpeg

সংঘর্ষের সময়ের ঘটনাস্থলের একটি বাড়ির বাইরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় । তাতে দেখা যায়, কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা করে একটি দল। ভাঙচুর করা হয় মোটরসাইকেল। ধারালো অস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে দেখা যায় কয়েকজনকে। ওই ফুটেজে ঘটনাস্থলে সাদেককে দেখা যায় মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলতে।

বক্তব্যের জন্য সাদেককে না পাওয়া গেলেও কথা হয় তার ছেলে মনির ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি জানান যুবলীগ নেতা কবিরের লোকজন তার ওপর হামলা করতে এলাকায় আসে। তখন এলাকায় পারিবারিক মসজিদ থেকে ‘ডাকাত পড়েছে’ বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

ঘটনার বর্ননা দিয়ে মনির বলেন, ‘ঢাকা ইপিজেড জোনের ভিতরে আমার ওয়েস্টেজ ব্যবসা মূলত। আজকে সকাল বেলা আমার দুইজন কর্মী ওয়েস্টেজ ভরার জন্য ইপিজেডের গেটে যায়। ওই জায়গায় কবির সরকারের লোকজন চরাও হইয়া আমার ছেলেদের উপর আক্রমণ করছে। এমনকি দা দিয়া মাথার ভিতর কোপাইছে। অনেক জখম হইয়া গেছেগা। মাজার ভিতর আর হাতেও কোপাইছে। ওই জায়গা থেকে আক্রমণ কইরা আমার বাসায় ভাদাইলে চইলা আসছে।

তিনি বলেন, ‘ইপিজেডের সামনে আমার গ্রাম। ভাদাইলে আইসা আমার বাসাতে হাঙ্গামা শুরু করছে। এমনকি চার-পাঁচ রাউন্ডের মত গুলি করছে। আর চাইটা-পাঁচটা আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। আর ওদের হাতে বড় বড় রাম দা ছিল। এমতাবস্থায় আমাদের পারিবারিক যে মসজিদ ওই মসজিদ থাইকা এলাউন্স করা হইছে যে, আমার বাসায় ডাকাত পড়ছে। আমরা আব্বা মেম্বার, যে মেম্বারের বাড়িতে ডাকাত আসছে। পরে লোকজন গ্রামবাসী আইসা আমাদের সেভ করছে। এমনকি তাদের কয়েকটা মোটরসাইকেলও গ্রামবাসী আটক কইরা রাখছে। পরে পুলিশ আইসা এগুলা নিয়া গেছে আর দুইটা গুলির খোসাও নিছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. রিয়াজ বলেন, ‘সকালে মাইকে ডাকাত পড়েছে ঘোষণা শুনে আমার ঘুম ভাঙে। তখন ছুটে বাসার সামনে রাস্তায় গিয়ে দেখি অনেকগুলো মোটরসাইকেল ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। তবে এলাকার কেউ মারামারি করেনি।’

স্থানীয় হাজী আমির উদ্দিন প্লাজার দোকানি দিশা চাকমা বলেন, ‘সকালে দোকান খোলার পরই হঠাৎ মারামারি শুরু হয়। পরে আতঙ্কে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যাই।’

এলাকার আরেক বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মসজিদের মাইকে মেম্বার ভূঁইয়ার বাড়িতে ডাকাত পড়ছে শুইনা আমি আসছি। আইসা দেখি অনেকগুলা মোটরসাইকেল ভাঙা পইরা রইছে। তবে কারা ভাঙছে আমি দেখি নাই। এলাকার লোকজন মাইকে ডাকাত পরার কথা শুইনা আসলেও কেউ মারামারি করে নাই।’

সংঘর্ষ শুরুর কিছুক্ষণ পর পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় ও ভাঙচুর করা মোটরসাইকেলগুলো পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে যায়।

সংঘর্ষ শুরুর কিছুক্ষণ পর পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ভাঙচুর করা মোটরসাইকেলগুলো পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে যায় তারা।