আশুলিয়ায় মুখ ঢেকে নগ্ন ‘ডাকাতদলের’ হানা, স্বর্ণ ও টাকা লুট

সাভার প্রতিনিধি: সবার মুখ মাস্কে ঢাকা। পুরো শরীরে অন্তর্বাস ছাড়াই কিছুই নেই দুর্বৃত্তদের। হাতে ধারালো দেশীয় অস্ত্র। গভীর রাতে জানালার গ্রিল কেটে ঢাকার সাভারে একটি বাড়িতে প্রবেশ করে এমন ১৫জনের দুর্বৃত্তদল। বাড়ির সবাইকে একটি কক্ষে আটকে মুখ ও হাত বেধে ফেলা হয় সবার। পরে লুটপাট করে স্বর্ণ ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায় তারা। এমন অভিযোগ লুট হওয়া বাড়ির ভুক্তভোগীদের।

বুধবার ভোর রাত ৪টার দিকে আশুলিয়ার কুঁরগাও এলাকার ঢাকা কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির মো. শাহজাহানের দুইতলা বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

মো. শাহজাহানের নাতনী ফারিহা প্রান্তা বলেন, আমাদের সবার সামনে ওরা অস্ত্র ধরে রেখেছিলো। শব্দ করলেই আমার শিশুকে ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছিলো বারবার। পরে আমার নানীর হাতের দুই ভরির স্বর্ণের চুরি, চেইন ও আংটি নিয়ে নেয়। আমার শরীরের স্বর্ণও খুলে নেয় তারা। এসময় ডাকাতরা বারবার আমার বড় মামা সোহেলকে খুঁজছিলো। উপরতলার তার রুমে গিয়েও খোঁজ করেছে। হাউজিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হাসান ভূঁইয়া বলেন, এলাকায় গাঁজা, মদ, ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের দৌরাত্মও অনেক বেশি। এগুলোর কোন প্রতিকার আমরা পাইনি।

বাড়ির মালিক মো. শাহজাহান বলেন, আমার দুই ছেলে তাদের স্ত্রী নিয়ে ভাড়া বাসায় বাইরে থাকে। আমি ও আমার স্ত্রী বাড়িতে বসবাস করি। দুইতলার রুমে আগে ছেলেদের পরিবার থাকতো। আমরা স্বামী-স্ত্রী নিচতলার কক্ষে থাকি। কয়েকদিন পূর্বে আমার নাতনি ও তার জামাই তাদের ছোট্ট শিশুকে নিয়ে বেড়াতে আসে। আজ ভোর রাত ৪টার দিকে হঠাৎ রুমের ভিতর অনেকজন ঢুকে আমাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। সবাইকে একটি রুমের মধ্যে নিয়ে আটকে হাত, মুখ ও চোখ বেঁধে ফেলে। তবে কাউকে মারধর করেনি। এসময় ঘরের সবকিছু লন্ডভন্ড করে নগদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা ও প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণ লুট করে ঘন্টাখানেক পর মেইন দরজা খুলে চলে যায়। পরে সকালে জানালার গ্রিল কাটা অবস্থায় দেখতে পাই।

তিনি আরও বলেন, ডাকাতরা সবাই যুবক বয়সের ছিলো। তাদের শরীরে আন্ডারওয়্যার ছাড়া কিছুই ছিলো না। তবে মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকা ছিলো এবং সবার পিঠেই ব্যাগ ছিলো।

ঢাকা কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হাসান ভূঁইয়া বলেন, পুরো সোসেইটিতে প্রায় ১০০ পরিবার বসবাস করেন। আগে নিরাপত্তার জন্য আনছার সদস্যরা থাকলেও এখন নেই। ফান্ডের অভাবে আনছারদের খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। আগের কমিটি কোন হিসাব না দিয়েই চলে গেছে। আমি কয়েকমাস হলো দায়িত্ব পেয়েছি। সোসাইটিতে ঢোকার তিনটি বড় রাস্তায় কেবল তিনজন সিকিউরিটি পাহাড়ায় থাকে। সিসিটিভিও নেই। যে বাড়িতে ঘটনা ঘটছে তার পিছন দিয়ে আরেকটি এলাকায় যাতায়াত উন্মুক্ত। ওখানেও প্রাচীর নির্মাণ করা দরকার। কিন্তু আমি অসহায়।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন বলেন, সকালে খবর পেয়ে আমাদের একটা মোবাইল টিম এখানে পরিদর্শনে আসে। পরেপরে আমিও ঘটনাস্থলে আসি। এসে ভুক্তভোগীদের কাছে জানতে পারি, দুর্বৃত্তরা সবাই না কি আন্ডারওয়্যার পড়া ছিলো। তারা গ্রিল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে। পরে লুটতরাজ করে সদর দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। তারা সংখ্যায় ১৫জনের মতো ছিলো বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তারা পরবর্তীতে এ বিষয়ে আইনগত সিদ্ধান্ত নেবেন।