আলমডাঙ্গায় সেতু নির্মাণের দাবি থাকা সত্ত্বেও ৫০ বছরে সুফল মেলেনি

  • খন্দকার শাহ আলম মন্টুঃ আলমডাঙ্গায়
  • একটি সেতুর অপেক্ষায় কয়েক দশক পার করেছেন মনাকষা-এলাহীনগরসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের হাজারো মানুষ। এখন সাঁকোই ভরসা তাঁদের। নিজেদের বানানো সেই সাঁকো দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন তাঁরা। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনায় পড়তে হয় তাঁদের। 
  • স্থানীয়রা জানান, বিগত ১৯৭২ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের খাল খনন করা হয় উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের মনাকষা ও এলাহীনগর গ্রামের মধ্য দিয়ে। এর ফলে পাশাপাশি অবস্থানরত দুটি গ্রাম আলাদা হয়ে যায়। সেই সময় মনাকষা গ্রামে তিন রাস্তার মোড়ে সাপ্তাহিক কাঁচাবাজার থাকায় একটি সেতু নির্মাণের দাবি থাকা সত্ত্বেও ৫০ বছরে সুফল মেলেনি। ফলে মনাকষা, এলাহীনগর, হাড়গাড়ী, সুকচা ও বাজিতপুরসহ আশপাশের অনেক অঞ্চলের মানুষের কাছে আধা কিলোমিটার যাতায়াতের রাস্তা এখন হয়ে গেছে ২-৩ কিলোমিটার। সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগামী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। তাদের ৫ মিনিটের রাস্তা পারি দিতে লাগে আধা ঘণ্টারও বেশি। তবে দূরত্বের চেয়ে বেশি সমস্যা নির্জন মাঠের নিরাপত্তাহীনতা। ফলে অনেক অভিভাবক তাঁদের মেয়ের পড়া বন্ধ করে দিয়ে বাল্যবিয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
  • এ বিষয়ে হাড়গাড়ি গ্রামের বাসিন্দা জান্নাতুন নাহার অ্যানির সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার মেয়ে পাইকপাড়া জন-কল্যাণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। একটি সেতুর অভাবে প্রায় ২-৩ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে পায়ে হেটে তাকে স্কুলে যেতে হয়। পথে অনেক বখাটে ছেলেরা উত্যক্ত করে। সেকারণে বাড়ির কাজ শেষে মেয়েকে নিয়ে ছুটতে হয় স্কুলের পথে। এলাহীনগর গ্রামের এক স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী সোনিয়া আর্ফিন তন্নী বলেন, বর্ষার সময় স্কুলে যেতে অনেক কষ্ট হলেও ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পাড় হয়ে যেতে হয়। বৃষ্টির দিনে সড়কে কাদাঁ-মাটিতে জামাকাপড় নোংরা হয়ে যায়। এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও ব্রিজ নির্মাণ হয়নি। পাইকপাড়া জনকল্যাণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো, রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাস্তা খারাপের কারণে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসতে চায় না। আবার আসতেও বিলম্ব হয়। তবে সবচেয়ে ভয়ের বিষয় ওই রাস্তায় ঝোপজঙ্গল রয়েছে। বখাটেরা প্রায়ই মেয়েদের বিরক্ত করে। আমি গ্রামবাসীর সহযোগিতায় সমস্যার সাময়িক সমাধান দিতেই একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দিয়েছি। কিন্তু এটা ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে একটা সেতু এপার- ওপার মানুষের মাঝে দারুণ সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারে। দিতে পারে সব সমস্যার সমাধান।’কালিদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুল হক মিকার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আপাতত বাঁশের সাঁকো বানানো হয়েছে। তবে সেটাও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ বাচ্চা ও বৃদ্ধদের জন্য সাঁকো পারাপার ঝুঁকির। আমাদের একটা সেতু খুবই দরকার।’চুয়াডাঙ্গা প্রধান প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ বলেন, আপাতত আমাদের কোন বাজেট নাই। তবে ব্রিজ অথবা ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবো। তিনি আরো বলেন, সেতু মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ আমরা যে বরাদ্দ পেয়ে থাকি, তা দিয়ে এ রকম বড় সেতু তৈরি করা সম্ভব নয়।