আবহাওয়া পরিবর্তনে শ্বাসকষ্ঠ বৃদ্ধের চেয়ে শিশুরা বেশি নিমোনিয়ায় আক্রান্ত

রাজশাহী ব্যুরোঃ প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে তাপমাত্রা কমছে। ভোররাতের দিকে রীতিমতো কম্বল জড়াতে হচ্ছে। সকালে আবার হালকা কুয়াশা। কিন্তু একটু বেলা হওয়ার পর দুপুর পর্যন্ত কড়া রোদ। তাই তাপমাত্রা অনেকটাই বেশি। রাজশাহীতে আবহাওয়ার এমন পরিবর্তনে বাড়ছে রোগ-বালাই। এতে হাসপাতালগুলোতে রোগিদের চাপ বাড়ছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ সাইফুল ফেরদৌসের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী গত এক সপ্তাহ ধরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, প্রতিবছরই শীতের শুরুতে রোগ-বালাই বেড়ে যায়। এবারও শুরু হয়েছে। তবে সেটা খুব বেশি তা নয়। শীত আরেকটু বাড়লে ঠা-াজনিত রোগ-বালাই বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। বেশি ভিড় নারীদের টিকিট কাটার লাইনগুলোতে। এদের বেশিরভাগই আবার কোলের শিশুকে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মালোকা বেগম নামে এক নারী বললেন, তিন দিন ধরে তার দুই বছরের শিশুর জ্বর। ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাইয়েছেন। কিন্তু জ্বর কমেনি। তাই হাসপাতালে এসেছেন। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা থেকে এসেছিলেন গৃহিণী মালেকা বেগম।

পুরুষের লাইনে টিকিট কাটার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন পবা থানার দারুশা গ্রামের বাসিন্দা সামিউল ইসলাম। তিনি জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তার কাশি থামছে না। তাই হাসপাতালে এসেছেন। বহির্বিভাগের চিকিৎসক ওষুধ দিলে তিনি বাসায় যাবেন। আর ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলে ভর্তি হয়ে যাবেন। এ জন্য সঙ্গে ছেলেকে এনেছেন। কাথা-বালিশও সঙ্গে আনা হয়েছে বাড়ি থেকে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই মূহুর্তে সবচেয়ে বেশি রোগী শ^াসকষ্ট আক্রান্ত হচ্ছে বৃদ্ধরা। তারপরই শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। তারা জ্বর, স্বদি, কাশি, নিউমোনিয়া এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। গত এক সপ্তাহ ধরে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ভর্তি হওয়ার জন্য রোগীর চাপ বেড়েছে জরুরি বিভাগেও। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বেডেই রোগী আছেন। বেড না পেয়ে রোগীরা ওয়ার্ডের মেঝে এবং বারান্দায় শুয়ে আছেন। শিশু এবং নারীদের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই এই চিত্র দেখা গেছে।
জন্মের পরপরই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে নগরীর নওদাপাড়া এলকার সামশুলের শিশুপুত্র ইকবাল হোসেনকে। সামসুল জানান, চারদিন আগে জন্ম নেয়া তার শিশুর শুক্রবার রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তরিঘড়ি করে বাড়ির পাশের ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটিকে রামেক হাসপাতালে পাঠান। সামশুল এখানে জানতে পারেন, জন্মের পরই ঠা-া লেগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে তার শিশুপুত্র।

রামেক হাসপাতালের তথ্যকেন্দ্র জানিয়েছে, এক সপ্তাহ আগেও মেডিসিন বিভাগে জ্বরে আক্রান্ত ভর্তির সংখ্যা ছিল প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন। বর্তমানে সেই রোগির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৪০ জনে। বড়দের তুলনায় শিশু ওয়ার্ডগুলোতেও বেড়েছে রোগির সংখ্যা। দুই সপ্তাহ আগে যেখানে জ্বরে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হতো ১০ থেকে ১৫ জন। বর্তমানে সেই সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ জন।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শীতের শুরুতে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং শিশুরা ঠা-াজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হন। এ সময় শিশু এবং বয়স্কদের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার থেকে বিরত এবং গরম খাবার খেলে রোগমুক্ত থাকা সম্ভব। খেয়াল রাখতে হবে ভোররাতে যেন ঠা-া না লাগে।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ সাইফুল ফেরদৌস বলেন, এখন রোগীর সংখ্যা একটু বেড়েছে। তবে হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। আমরা রোগীর চাপ সামাল দিতে প্রস্তুত আছি। কিছু দিন পর খেঁজুরের রস থেকে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীও আসার আশঙ্কা রয়েছে। সেটার ব্যাপারেও আমাদের প্রস্তুতি আছে।