আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে এরদোগান-ইমরান খান

গত ১৫ আগস্ট কাবুল তালেবানের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক শাসনের অবসান হওয়ায় এবং নিরাপত্তা শূন্যতার অজুহাতে দেশটি ঘিরে বহুমুখী স্বার্থ কেন্দ্রীভূত হতে থাকে।

নিজ নিজ স্বার্থে আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় নেমেছে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান এবং ইউরেশিয়ার প্রভাবশালী মুসলিম দেশ তুরস্ক। তালেবানশাসিত আফগানিস্তানকে নিজেদের বলয়ে টানতে দুই মুসলিম দেশের প্রতিযোগিতা এখন প্রকাশ্যে। এক ধরনের কূটনৈতিক দ্বন্দ্বও দেখা দিয়েছে দুদেশের মধ্যে। মিডল ইস্ট আইয়ের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

আফগানিস্তান ইস্যুতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মধ্যে সম্প্রতি কথা হয়েছে। আফগানিস্তান ইস্যুতে দুদেশের মধ্যে দৃশ্যমান টানাপোড়েন নিরসনের লক্ষ্যেই মূলত এ আলোচনা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তালেবানশাসিত আফগানিস্তানে প্রথম থেকেই প্রভাব বিস্তার করতে সচেষ্ট ছিল তুরস্ক। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান তাদের সহায়তা করবে এমন প্রত্যাশা ছিল এরদোগানের। সেই চাওয়া পূরণ না হওয়ায় ইসলামাবাদের ওপর অনেকটাই হতাশ আঙ্কারা।

এরদোগানের প্রত্যাশা ছিল— যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানে তুরস্কের উপস্থিতি থাকার পক্ষে থাকবে ইমরান খানের সরকার। আফগানিস্তানের বিমানবন্দরের নিরপত্তা নিশ্চিতে তুরস্কের সেনাদের পাকিস্তান সহায়তা করবে— এমনটি চাওয়া ছিল এরদোগানের। কিন্তু কাবুলে আঙ্কারার প্রভাব বিস্তারে ইসলামাবাদের সমর্থন নেই। বিষয়টি নিয়ে নাখোশ এরদোগানের সরকার।

পাকিস্তানের সঙ্গে তুরস্কের শক্ত অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। এতদসত্ত্বেও আফগানিস্তানে তুরস্কের প্রভাব বৃদ্ধিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে ধরে নিয়েছে পাকিস্তান।

তুরস্কের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের পিএইচডি গবেষক গালিপ দালাই বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়াসহ যেসব কূটনৈতিক উদ্যোগ তুরস্ক নিয়েছিল, সেটি মূলত সীমিত হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান সেখানে নিজেদের জোরালো উপস্থিতির জন্য তুরস্ককে হুমকি মনে করছে। এ কারণে তাদের কোনো ধরনের সহায়তা করেনি।

এদিকে তালেবাননিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে এখন বহুমুখী স্বার্থ বিরাজ করছে। চীন ও রাশিয়াও দেশটির বিষয়ে সচেতন। দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়া ও চীনের সহায়তায় পাকিস্তান সেখানে নিজেদের প্রভাববলয় আরও সুদৃঢ় করতে চাইছে। এ ক্ষেত্রে তুরস্ককে কোনো ধরনের ছাড় দিতে নারাজ ইমরান খানের সরকার।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক গালিপ দালাই বলেন, অথচ এরদোগানের সরকার ভেবেছিল পাকিস্তান ও তালেবান উভয়েই সেখানে তুরস্ককে স্বাগত জানাবে।

‘আঙ্কারা ভেবেছিল তালেবান তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে, তাদের স্বাগত জানাবে; কিন্তু এটি চিন্তা কাজে আসেনি। পাকিস্তানও তুরস্কের প্রত্যাশামাফিক কাজ করেনি। এ কারণে পাকিস্তানের ওপর হতাশ তুরস্ক’-যোগ করেন গালিপ।

প্রসঙ্গত ২০১৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি, ফ্রান্সসহ অন্যান্য ন্যাটোভুক্ত মিত্র দেশের সঙ্গে তুরস্কের সেনারা কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে। আঙ্কারার চাওয়া ছিল— ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো সেনা প্রত্যাহার করে নিলেও তারা আফগানিস্তানে থেকে যাবে।