আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মেম্বার ও সাবেক চেয়ারম্যান পুত্রের হামলায় আহত ২০

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের কালীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাগরী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ অলিউল ইসলাম অলি সমর্থকদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটে। উপজেলার নাগরী ইউপি সদস্য মো. সেলিম মিয়া, ওই ইউনিয়নের প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মিয়ার ছেলে অর্ণব ও আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে দাবি ভূক্তভোগীদের। এতে কমপেক্ষ ২০ জন অলি চেয়ারম্যানের সমর্থক আহত হয়।

বুধবার (১৪ জুলাই) সকালে উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের শহীদ ময়েজউদ্দিন চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে রাতে হামলার শিকার আহত শামীম হোসেন ও কবির হোসেনের ভাই কামাল হোসেন বাদী হয়ে ২৩ জনের নামে ও অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে কালীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

রাতেই অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম মিজানুল হক।

জানা গেছে, বুধবার (১৪ জুলাই) সকালে রায়েরদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঈদ উপহার বিতরণ কার্যক্রমে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকিএমপি অনুষ্ঠানস্থলে আসার সময় পথিমধ্যে শহীদ ময়েজউদ্দিন চত্ত্বর এলাকায় অভ্যর্থনা জানানোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মেম্বার সেলিম মিয়া, প্রয়াত চেয়ারম্যান আব্দুল কাদিরের ছেলে অর্ণব ও আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্থানীয় ও বহিরাগত শতাধীক সশস্ত্র লোক নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বর্তমান চেয়ারম্যান অলিউল ইসলাম অলির সমর্থিত নিরশস্ত্র লোকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।

এ সময় বড়কাউ গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে কবির হোসেন (৪৫) ও শামীম হোসেন (৩০), মৃত জমির ফকিরের ছেলে সুরুজ মিয়া (৬৫), মৃত জহুর উদ্দিনের ছেলে শুক্কুর আলী (৬৫), কামাল হোসেনের ছেলে লিমন মিয়া (১৮) ও গোলজার হোসেনের ছেলে লিসান (১৮) গুরুতর আহতসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। আহতরা কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গুরুতর আহত কবির মিয়া বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আমরা শহীদ ময়েজউদ্দিন চত্বরে উপস্থিত হই। এ সময় একই জায়গায় মুজিবুর, সেলিম মেম্বার, অর্ণব এবং আরো কিছু বহিরাগত লোকজন উপস্থিত ছিল। হঠাৎ করে কিছু বুঝে উঠার আগেই পার্শ্ববর্তী গ্রামীন বিলাস ও পাগলা বাবুর্চি রেস্টুরেন্টের ভিতরে পূর্ব থেকে মজুদ করে রাখা দেশীয় ধারালো অস্ত্র বের করে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।

হামালায় আরেক আহত সুরুজ মিয়া জানান, তারা সবাই যখন সেখানে যান তখন হঠাৎ করেই তাদের উপর মুজিবুর, অর্ণব ও সেলিম মেম্বারের নেতৃত্বে হামলা হয়। আমাদের লোকজন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে ছুটতে থাকলে তারা দেশিয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর আক্রমন চালায়। এতে করে আমাদের কমপক্ষে ২০ জনের মত লোক আহত হয়। তবে আহতের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা গুরুতর বলেও জানান তিনি।

হামলার প্রত্যক্ষদর্শী নাগরী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মানিক শেখ বলেন, আমি ঘটনাস্থলে নিজে উপস্থিত ছিলাম। ঘটনার সময় মুজিবুর রহমান, সেলিম মেম্বার ও অর্ণবের নেতৃত্বে স্থানীয় ও বহিরাগত শতাধিক লোক হঠাৎ করে বর্তমান চেয়াম্যান অলিউল ইসলাম অলির সমর্থকদের উপর দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়।এতে অলি চেয়ারম্যানের সমর্থকদের ২০ আহত হয়। এ সময় আমি বাধা দিতে গিয়ে নিজেও হামলার শিকার হয়েছি।

তিনি আরো বলেন, মুজিবুর-অর্ণব ও সেলিম মেম্বার খারাপ প্রকৃতির লোক। তাদের বিরুদ্ধে বড়কাউ গ্রামের পুলিশ হত্যা মামলার রয়েছে। এছাড়াও সেলিম মেম্বারের নির্যাতন মামলা রয়েছে।

অভিযুক্ত অর্ণব বর্তমান চেয়ারম্যান অলিউল ইসলাম অলির লোকেরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে বলে জানান। তবে হামলায় কারা আহত হয়েছে এমন এক প্রশ্নের জাবাবে অর্ণব তা বলতে পারেননি।

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান জানান, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তবে যতটুকু জানতে পেরেছি অলির লোকজন আগে থেকে উপস্থিত হয়ে অর্ণব ও সেলিম মেম্বারের লোকদের উপর হামলা চালায়। তবে হামলায় কতজন আহত হয়েছেন জানা নাই।

অভিযুক্ত সেলিম মেম্বার জানান, তিনি ঘটনাস্থলে থাকলেও হামলায় জড়িত ছিলেন না। তবে দুই পক্ষেকে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান অলিউল ইসলাম অলি জানান, আজকের অনুষ্ঠানের জন্য আমি সকাল থেকে স্কুল মাঠে ছিলাম। হঠাৎ মুঠোফোনের মাধ্যমে জানতে পারি মুজিবুর রহমান, সেলিম মেম্বার এবং অর্ণবের নেতৃত্বে আমার লোকজনের উপর অতর্কিত হামলা করে। তারা বর্তমানে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন। ইতিমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আহতদের চিকিৎসার সার্বিক খোঁজ-খবর নিয়েছেন।

এ ব্যপারে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম মিজানুল হক বলেন, খবর শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।