আওয়ামী লীগে অস্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নানা ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্বস্তি বাড়ছে। একের পর এক ঘটনায় বিব্রত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা না পারছেন সইতে, না পারছেন কইতে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এখন দলের ভিতরেই নানারকম আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। দলের নেতাকর্মীরা একান্ত আলাপচারিতায় এসব নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন। এক ধরনের বিরক্তিও প্রকাশ করছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে নিয়ে এ কথা বলতে কেউই রাজি নন। সাম্প্রতিক সময়ে যে সমস্ত বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি চলছে তার মধ্যে রয়েছে-

১. বেপরোয়া ছাত্রলীগ: ছাত্রলীগকে যেন কিছুতেই মানানো যাচ্ছে না। ছাত্রলীগ একের পর এক দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ বন্ধ হয়ে গেল। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ঘটনায় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বিব্রত। আর সর্বশেষ ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সহিংসতার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ আছে। এ সমস্ত ঘটনাগুলো ক্রমশ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের অস্বস্তি।

২. প্রতিমন্ত্রীর অডিও: সাম্প্রতিক সময়ে একজন প্রতিমন্ত্রীর একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। এই অডিওতে ওই প্রতিমন্ত্রী একজন চিত্রনায়িকার সাথে কথা বলছিলেন। এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম কথাবার্তা হচ্ছে। এটি আসলেই প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য কিংবা যে কথিত নায়িকার কথা বলা হয়েছে তার বক্তব্য কিনা সেটি যাচাই-বাছাই করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। তবে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্য ব্যক্তিগত। কিন্তু একজন মন্ত্রীর এ ধরনের কথাবার্তা আওয়ামী লীগের অনেককেই বিব্রত করেছে। তারা মন্ত্রীদের টেলিফোনে আলাপ চারিতায় দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত বলে মনে করেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে যে, একান্ত ব্যক্তিগত আলাপচারিতার অডিও কিভাবে ভাইরাল হয় সেটিও একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে সামনে এসেছে। এ ক্ষেত্রে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষা হয়নি বলেও মনে করেন অনেকে। কারণ ব্যক্তিগতভাবে একজন আরেকজনের সঙ্গে যে ব্যক্তিগত আলাপচারিতা করবে সেই ব্যক্তিগত আলাপচারিতা কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে আসে সেটি একটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় বলেই মনে করছেন অনেকে।

৩. ইউপি নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলে কোন্দল: ইউপি নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলে কোন্দল কমছেই না। একের পর এক মনোনয়ন নিয়ে বিতর্কের ফলে তৃণমূল এখন রীতিমত বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং এ নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে অশান্তি এখন আর কোনো গোপন বিষয় না। আওয়ামী লীগের অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ভবিষ্যতে এটির মূল্য দিতে হবে বলেও আওয়ামী লীগের অনেকে মনে করছেন।

৪. অনুপ্রবেশকারীদের দাপট: আওয়ামী লীগে এখন অনুপ্রবেশকারীদের জয়জয়াকার চলছে। অনুপ্রবেশকারীরাই যেনো দলের সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছেন। বিশেষ করে তৃণমূলে অনুপ্রবেশকারীদের অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য বড় সংকটের কারণ বলে অনেকে মনে করছেন। এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কিংবা এখন যে কমিটিগুলো হচ্ছে সেই কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও অনুপ্রবেশকারীদেরই বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য যথেষ্ট চিন্তার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

৫. কমিটি বাণিজ্য: সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের যে নতুন কমিটিগুলো হচ্ছে সেই কমিটিতে ব্যাপক বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে কমিটিতে ঢোকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগটি আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দলের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আর এ সমস্ত বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্রমশ অস্থিরতা বেড়েই চলেছে।