আওয়ামী লীগ কি বিএনপির কাছে হেরে যাচ্ছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনীতিতে ক্রমশ উত্তাপ বাড়ছে। বিএনপি ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশ করছে। কাল সিলেটে বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিকভাবে প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি নতুন করে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, বিএনপির রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ইত্যাদি উপলক্ষ মাত্র, আসলে সরকারকে ঘায়েল করার জন্য ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে ক্ষমতার বাইরে থাকা এই রাজনৈতিক দলটি। আর কিছু কিছু বিষয়ে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করে ফেলেছে বিএনপি, এমন পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষকদের। যে সমস্ত বিষয়ে বিএনপি আওয়ামী লীগকে প্রায় কোণঠাসা করে ফেলেছে তার মধ্যে রয়েছে-

১. অপপ্রচার: অপপ্রচারের দিক থেকে বিএনপি আওয়ামী লীগকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতারা একের পর এক নানা রকম অপপ্রচার করছে। সেই অপপ্রচারগুলোর জবাব ঠিকঠাক মত দিতে পারছে না আওয়ামী লীগ। দেশে অর্থনৈতিক সংকট, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে, আইএমএফের কাছে কাছ থেকে ঋণ পেয়ে দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে, জনজীবনে অস্থিরতা ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে বিএনপি নেতারা প্রতিনিয়ত যে কথাগুলো বলছে সেই কথার বিপরীতে আওয়ামী লীগের নেতারা সরকারের উন্নয়ন, ১৪ বছরের সাফল্য এবং দেশ যে এখনো ভালো আছে বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যেও সেটি তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছেন। অপপ্রচারের মাত্রা এমনভাবে বেড়ে গেছে যে সাধারণ মানুষের কাছে এই সমস্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য গুলো এখন বিশ্বাসযোগ্য সত্য বলে উপস্থাপিত হচ্ছে।

২. গুজব: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন মোটামুটি বিএনপি-জামাতের দখলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিরন্তরভাবে সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম প্রচার-প্রচারণা তুঙ্গে উঠেছে। বাংলাদেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন সাইবার সন্ত্রাসী সরকারের বিরুদ্ধে এমন কুৎসিত-মিথ্যাচার করছে যেগুলো পাঠের অযোগ্য এবং কুরুচিপূর্ণ। এই সমস্ত বক্তব্যগুলো ভাইরাল করে দেওয়া হচ্ছে, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি বিবর্ণ-মলিন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেই বললেই চলে। ফলে সাইবার যুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রায় ধরাশায়ী হয়ে পড়েছে। এমন সব কল্পিত কথাবার্তা উপস্থাপন করা হচ্ছে যেগুলো সাধারণ মানুষ এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন।

৩. কূটনৈতিক: কূটনীতিতেও আওয়ামী লীগকে পেছনে ফেলেছে বিএনপি। বিশেষ করে বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠক করে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন, বিরোধী দলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিএনপি লাগাতারভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের অবস্থা সেখানে অনেকটাই নিষ্প্রভ। যার কারণে কূটনীতিকদের কাছে এখন বিএনপির বক্তব্যই বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে। কূটনীতিকরা অনেকেই এখন বিএনপির ভাষায় কথা বলছেন। যে কারণে আওয়ামী লীগের জন্য এখন একটি বড় সংকট তৈরি হয়েছে কূটনৈতিক পাড়ায়। পশ্চিমা দেশগুলো আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আস্তে আস্তে নানা রকম প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচন, আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে, মানবাধিকার পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপির দেশে-বিদেশে লাগাতার তৎপরতা এবং অপপ্রচার আওয়ামী লীগকে রীতিমতো কোণঠাসা করে ফেলেছে।

৪. রাজনৈতিক মেরুকরণ: রাজনৈতিক মেরুকরণেও আওয়ামী লীগ-বিএনপির কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের যে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে সেখান থেকে একলা চলো নীতিতে অনুসৃত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অন্যতম শরিক ১৪ দল এখন নিষ্ক্রিয়, মহাজোট নেই বললেই চলে। এমনকি আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র জাতীয় পার্টির অবস্থাও অনেকটাই আওয়ামী লীগবিরোধী। অন্যদিকে, বিপরীত চিত্র বিএনপির পক্ষ থেকে। বিএনপি ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে, তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে বলে তারা ঘোষণা করেছে। এই সমস্ত যুগপৎ আন্দোলন গুলোতে ২২টি দলকে পাশে পাবে বলেও তারা আশা করছে। এমন একটি দৃশ্যমান পরিস্থিতি বিএনপি সৃষ্টি করেছে যাতে মনে হচ্ছে যে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোই এখন শক্তিশালী। সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দৃশ্যমান দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলো ম্লান এবং ম্রিয়মাণ মনে হচ্ছে।

৫. উন্নয়ন এবং সাফল্য প্রচারে ব্যর্থতা: আওয়ামী লীগ সরকার তার ১৪ বছরের উন্নয়ন পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পসহ ব্যাপক উন্নয়নের কথা প্রচার করতে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দশটি উদ্যোগ যার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে সে সব সম্পর্কেও আওয়ামী লীগের প্রচারণা অত্যন্ত দুর্বল। অন্যদিকে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগ লাগাতারভাবে উপস্থাপন করছে। ফলে উন্নয়নের যে চিত্রটি তা জনগণের কাছে ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।

তবে এই পাল্টাপাল্টি লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের শক্তি একটাই, তা হলো জনগণ। এখনো সাধারণ মানুষ মনে করে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে শেখ হাসিনা দেশকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম, এমন বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি।