আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে ৬ অকার্যকর সদস্য

এই আমার দেশ ডেস্ক

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সবচেয়ে নীতিনির্ধারণী সংস্থা। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের পরই এটি দলের সর্বোচ্চ ফোরাম। প্রেসিডিয়ামের সদস্য হওয়া আওয়ামী লীগের কর্মীদের জন্য একটি সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এবং সারাজীবন একজন কর্মী ত্যাগ স্বীকার করেন এইরকম একটি সর্বোচ্চ পদে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের কার্যকারিতা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী এই সংস্থাটি কতটুকু কার্যকরী এবং অর্থবহ ভূমিকা পালন করছে এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন এবং আব্দুল মতিন খসরুর জায়গায় প্রেসিডিয়ামে ৩ জন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যারা সবাই রাজনীতিমনস্ক এবং রাজনীতিতে ভূমিকা রাখেন। এর পরপরই প্রশ্ন উঠেছে যে প্রেসিডিয়ামে এ ধরনের কার্যকরী সদস্য থাকা উচিৎ। যে ৩ জনকে প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন- মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, এইচ এম খায়রুজ্জামান চৌধুরী এবং অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন যে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে এই ধরনের কার্যকর রাজনীতিমনস্ক এবং রাজনীতিতে সবসময় সক্রিয় ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করেন যে, ১৯ সদস্যের এই প্রেসিডিয়ামে অন্তত ছয়জন অকার্যকর যাদের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে তেমন ভূমিকা চোখে পড়ে না। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রেসিডিয়ামের প্রধান সদস্য হলেন দলের সভাপতি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সেখানে পদাধিকারবলে যুক্ত থাকেন। এর বাইরে ১৭ জন প্রেসিডিয়ামের সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের কোনো কার্যক্রম ইদানীং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চোখে পড়ে না। এদের মধ্যে রয়েছেন-

১. কাজী জাফরউল্লাহ: কাজী জাফরউল্লাহ আওয়ামী লীগের দুর্দিনের সঙ্গী ছিলেন এবং কঠিন সময়ে তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু এখন নিজের জেলা-ফরিদপুরেই তিনি কোণঠাসা। সেখানে নিক্সন চৌধুরীর কাছে ধরাশায়ী হওয়ার পর একধরনের নিষ্ক্রিয়তা রয়েছে। প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে তিনি দৃশ্যমান কার্যক্রমের মধ্যে নেই। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি তাকে বেশ কিছু সাংগঠনিক দায়িত্ব দেন এবং সেই সাংগঠনিক দায়িত্ব তিনি পালন করেন।

২. ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন: ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রামের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। কিন্তু প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর তার কার্যক্রম তেমনভাবে দৃশ্যমান নয়।

৩. নুরুল ইসলাম নাহিদ: নুরুল ইসলাম নাহিদ কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে আসা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আগ পর্যন্ত তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। প্রথম মেয়াদে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে সফল হলেও দ্বিতীয় মেয়াদে নানারকম বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাকে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থায় নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে তিনি কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন, দলের জন্য কোন অবদান রাখছেন কিনা এ নিয়ে দলের মধ্যেই অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলেন, দলে নাহিদের চেয়ে অনেক বিচক্ষণ এবং ত্যাগী রাজনীতিবিদরা রয়েছেন যাদেরকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেত। কিন্তু নুরুল ইসলাম নাহিদকে যেহেতু আওয়ামী লীগ সভাপতি পছন্দ করেছেন সেজন্য নেতাকর্মীরা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য বা প্রতিবাদ করেন না। কিন্তু তারা মনে করেন যে, নুরুল ইসলাম নাহিদের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা দরকার।

৪. আব্দুল মান্নান খান: আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সবচেয়ে বড় বিস্ময়য়ের নাম আব্দুল মান্নান খান। তিনিও কমিউনিস্ট পার্টি এবং ছাত্র ইউনিয়ন থেকে আসা। ওয়ান-ইলেভেনের সময় তার ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এরপর তিনি আর নির্বাচন করেননি। তাঁর আসন থেকে নির্বাচন করছেন সালমান এফ রহমান। কিন্তু আব্দুল মান্নান খান আওয়ামী লীগের মতো বিরাট রাজনৈতিক দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার জন্য কতটুকু উপযুক্ত এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই নানারকম প্রশ্ন উঠে।

৫. রমেশ চন্দ্র সেন: রমেশ চন্দ্র সেন উত্তরাঞ্চল থেকে প্রেসিডিয়ামের সদস্য হয়েছেন। তিনি ২০০৯ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে, দলের বিভিন্ন পদক্ষেপে রমেশ চন্দ্র সেনের ভূমিকা কতটুকু এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

৬.পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য: পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা। সম্ভবত এ কারণে তাকে প্রেসিডিয়ামে রাখা হয়েছে। তবে প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে তাঁর যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার কথা সেটি দৃশ্যমান নয়।