আওয়ামী লীগের এখন মূল চিন্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি বছরেই যে আওয়ামী লীগ কাউন্সিল করছে তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়েছে। আওয়ামী লীগের এখনকার রাজনৈতিক সমস্ত তৎপরতা কাউন্সিলকে ঘিরেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অন্তত এক বছর আগে আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশন করতে চায়। ইতিমধ্যে কাউন্সিলকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ একাধিক তৎপরতা গ্রহণ করেছে। প্রথমত, বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সম্মেলন করছে। করোনার সংক্রমণ যখন বেড়েছিল সেই সময়েও এই সম্মেলন কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। সারাদেশে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে এবং আগামী জুনের মধ্যে অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন করতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে এই সম্মেলন শেষ না হলেও জাতীয় কাউন্সিলের সঙ্গে এই কাউন্সিলের তারিখ পেছাবে না বলেই আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। তৃতীয়ত, কোন্দল নিরসন। বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের যে উপজেলা অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সেই কোন্দল নিরসনের জন্য আওয়ামী লীগ দফায় দফায় বৈঠক করছে এবং বিবদমান দুই পক্ষকেই একসঙ্গে নিয়ে বসা হচ্ছে। তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে যে, সারাদেশে অন্তত ৪৬টি জেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি জেলার কোন্দল অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই কোন্দলগুলো কাউন্সিলের আগেই আওয়ামী লীগ যেকোনো মূল্যে নিরসন করতে চায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই তিনটি কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ তার পরবর্তী কাউন্সিল অধিবেশনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করতে চাচ্ছে। আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেশ অসুস্থ। তার অসুস্থতার কারণে তিনি দলের সমস্ত কার্যক্রমে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। এটি সাংগঠনিক ক্ষেত্রে এক ধরনের দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। আর সেকারণেই আগাম কাউন্সিলটা আওয়ামী লীগের জন্য জরুরী বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ দলকে যদি সংগঠিত করতে হয় তাহলে একজন সার্বক্ষণিক সাধারণ সম্পাদক অত্যন্ত প্রয়োজন।
এটি না করা গেলে সাংগঠনিক যে বিরোধ, দুর্বলতা সেটি কাটিয়ে ওঠা যাবে না। আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, বিরোধী দল যতই হুমকি দিক, তাদের পক্ষে রাজপথের আন্দোলন করা সম্ভব নয়। বরং বিরোধীদল কি আন্দোলন করবে বা কোন দাবি উপস্থাপন করবে সেই বিষয়ে নজর না দিয়ে আওয়ামী লীগ এখন নিজেদের সংগঠন গোছানোর দিকেই নজর দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক গোছানোর প্রথম পর্ব হবে কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে দলকে সুশৃংখল করা। আর দ্বিতীয় ধাপ হবে নির্বাচনের প্রস্তুতি করা। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সংগঠন গোছানোর দুটি একই সূত্রে গাঁথা এবং দুইটি সমান্তরালভাবে চলবে। একটি আরেকটির প্রতিবন্ধক নয়, পরিপূরক। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগের এখন মূল চিন্তা সংগঠন। আওয়ামী লীগ মনে করে যে, শক্তিশালী সংগঠন থাকলে বিরোধী দল আন্দোলন করুক বা নির্বাচন আসুক, দুটিই মোকাবেলা করা সম্ভব। কিন্তু সংগঠন যদি দুর্বল হয় তাহলে সব ক্ষেত্রেই সমস্যা হতে পারে। এ কারণেই আওয়ামী লীগ এখন কাউন্সিলের দিকেই বেশি মনোযোগী।