বিনোদন ডেস্ক : একের পর এক প্রয়াত হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের গুণী ব্যক্তিত্বরা। গেল মাসে মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ হারিয়েছে আমজাদ হোসেন, আনোয়ার হোসেন এবং সাইদুল আনাম টুটুলের মতো চলচ্চিত্রের তিন গুণী মানুষকে। গেল সপ্তাহে মারা গেলেন দেশীয় চিত্রকলার কিংবদন্তীতূল্য চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর। এবার রাজনীতির মাঠের গুণী মানুষ ও অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে হারালো বাংলাদেশ। দল মত নির্বিশেষে যার গ্রহণযোগ্যতা ছিলো সব শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে।
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। একই হাসপাতালে গত ডিসেম্বর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তারকা নির্মাতা আমজাদ হোসেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন দেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আওয়ামী লীগের গুণী এই রাজনীতিবীদকে হারিয়ে শোকাচ্ছন্ন গোটা দেশ।
বর্তমান সরকারের জনপ্রশাসনমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও রাজনীতিতে নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে আপোসহীন, সৎ ও ত্যাগী নেতা ছিলেন বলেই সব শ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা পাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এই নেতার মৃত্যুতে সারা বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে শোক জানাচ্ছেন, তেমনি শোবিজ অঙ্গনের মানুষরাও তার প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশ করে শোক জানাচ্ছেন সোশাল মিডিয়ায়।
নাট্য নির্দেশক মাসুম রেজা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে লিখেন, পছন্দ করি এমন হাতে গোনা কয়েকজন রাজনীতিকের আপনি ছিলেন একজন। আপনার জন্য অশেষ শ্রদ্ধা।
সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর খবরে শোকাহত চিত্রনায়ক রিয়াজ। সহমর্মীতা জানিয়েছেন তিনিও। নির্মাতা খিজির হায়াত লিখেন, ‘শান্তিতে থাকুন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্টের পুত্র।’ সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ লিখলেন, ‘যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। গভীর শোক ও শ্রদ্ধা।’
সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুকে আকাশ থেকে তারা খসে পড়ার সঙ্গে তুলনা করে চিত্রনায়ক ওমর সানী লিখেন, ভালো মানুষগুলো খুব দ্রুত চলে যায়। না ফেরার দেশে ভালো থাকবেন। বাংলাদেশ নামক আকাশ থেকে একটি তারা খসে পড়ল। সৈয়দ আশরাফ ছিলেন একজন সজ্জন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবীদ। তার মৃত্যুর খবর শুনে মনটা যারপরনাই খারাপ হয়েছে! যেই রাজনীতিবিদরা বেঁচে আছেন তাদের বলছি, ভালো কাজ করে যান যেন মরণের পরে মানুষ এমন করে মনে করে।
সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে স্মৃতিকাতর অভিনেত্রী ও কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন পত্নী মেহের আফরোজ শাওন। সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে স্মৃতি তুলে ধরে শাওন লিখেন, তাঁর কাছ থেকেই প্রথম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র হাতের চমৎকার রান্নার গল্প শুনেছি। তখন আমাদের দখিন হাওয়ার বসার ঘরে কোনও সোফা ছিল না। এতো বড় একজন নেতা বাসায় এসেছেন! প্রতিবেশির কাছ থেকে একটা সিঙ্গেল সোফা নিয়ে এসেছি। কিন্তু তিনি বসলেন মাটিতে, হুমায়ূন-এর পাশে আসন করে। কি সুন্দর করে বলছিলেন শেখ হাসিনার মতো একজন রাজনীতিবিদের সাধারণ জীবনের মমতাময় সব গল্প! দলের প্রতি কি তাঁর আত্মোৎসর্গ..! সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বিশুদ্ধতম আওয়ামী রাজনীতিবিদ। আপনার প্রস্থানে আমরা একজন অভিভাবক হারালাম।
জনপ্রিয় অভিনেতা স্বাধীন খসরু লিখেন, একজন সৎ রাজনীতিবিদের প্রস্থান! আশরাফ ভাই…লন্ডনে আমার বাংলা নাটকের প্রথম পরিচালক। ঢাকাতে প্রায়ই ন্যাম ভবন, পরে ২১ বেইলি রোডে যাওয়া আসা ছিলো।
শোক প্রকাশ করেছেন চিত্রনায়ক ও শিল্পী সমিতির নেতা জায়েদ খান। তিনি লিখেন,চির বিদায় নিলেন, রাজনৈতিক কিংবদন্তী নেতা সৈয়দ আশরাফ। আল্লাহ তাকে জান্নাত বাসী করুন আমিন।
সৈয়দ আশরাফের এলাকার হওয়ায় একটু যেন বেশী স্মৃতিকাতর চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক। জনসভার বেশকিছু ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে ফেসবুকে সাইমন লিখেন, ৯৬ সাল থেকে আপনার কথা বলে আসছি,সেদিন যেনো আবেগ টা বেশিই ছিলো। কারণ আপনার শূন্যতা পূরণ হবার নয়! আপনি আমাদের মাঝে আর আসবেন না,এটা মেনে নেয়া কঠিন। আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
নির্মাতা হাসিবুর রেজা কল্লোল লিখেন, মৃতদের কান্নার কোনো শব্দ থাকে না।
‘গাড়িওয়ালা’ খ্যাত নির্মাতা আশরাফ শিশির লিখেন, আশরাফ`রা একে একে চলে যাচ্ছেন…
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা মাসুদ পথিক লিখেন, সৈয়দ আশরাফ, একজন প্রকৃত আদর্শিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
তাঁর জন্য সুদীর্ঘ শোক।
নাট্য নির্মাতা মাহমুদ দিদার লিখেন, সত্যের মতো মহীয়ান। বুক তাঁর বাংলাদেশের হৃদয়…
ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো’র শিল্পী লুৎফর হাসান লিখেন, আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের রাজনীতির কয়েকজন কিংবদন্তিকে বাংলাদেশ মনে রাখবে সব সময়। তাঁদের অন্যতম স্বচ্ছ মানুষটি চলে গেলেন। শ্রদ্ধা। ভালো থাকবেন স্যার।
সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেসবুকে স্মৃতিচারণ করেছেন তারকা অভিনেতা, অভিনেত্রী, শিল্প-সাহিত্যাঙ্গনের মানুষেরাও।