ডেস্ক রিপোর্ট: ১০০ কোটি টাকা ও এর বেশি অঙ্কের ঋণখেলাপিদের ওপর বিশেষ তদারকি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকের এসব খেলাপির কাছ থেকে ঋণ আদায় বাড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ জন্য প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গঠন করতে হবে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল। এ সেল খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় পরিস্থিতি প্রতি তিন মাস অন্তর ব্যাংকের পর্ষদ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাবে।
এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) কাছে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে এসব বিষয়ে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সব মহল থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। খেলাপি ঋণ কমাতে আদায় বাড়ানোর জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় বিশেষ তদারকি হলে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়বে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের মতে, বিশেষ তদারকির ফলে একদিকে খেলাপিরা চাপে পড়বে, অন্যদিকে ব্যাংকাররাও ঋণ আদায় বাড়াতে চাপের মধ্যে থাকবেন।
সার্কুলারে বলা হয়, সব ব্যাংকের ঋণ আদায়ের সঙ্গে জড়িত একজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমডি) প্রধান করে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। এতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল দিতে হবে।
এ সেল থেকে ১০০ কোটি টাকা ও এর বেশি অঙ্কের যেসব ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের কাছ থেকে ঋণ আদায় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে এসব ঋণখেলাপির সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায় বাড়িয়ে বা নবায়ন করে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
এ সেল থেকে ঋণ আদায় বা নবায়নের মাধ্যমে যে অগ্রগতি হচ্ছে তা প্রতি তিন মাস পরপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে জানাতে হবে। একই সঙ্গে ওই প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও পাঠাতে হবে।
প্রতিবেদনে ঋণগ্রহীতার সব ধরনের তথ্য থাকবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে একটি নির্দিষ্ট ছকও দেয়া হয়েছে। এতে রয়েছে- গ্রাহকের কোম্পানির নাম, গ্রুপের নাম, পরিচালকদের নাম, ঋণের বিবরণ ইত্যাদি।
বিশেষ তদারকির ফলে কোনো খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হলে বা অন্য কোনো কারণে নিয়মিত হলে ওই ঋণের সার্বিক পরিস্থিতি পরবর্তী ৮টি ত্রৈমাসিক বা ২ বছর পর্যন্ত মনিটরিং প্রতিবেদনে তথ্য দিতে হবে।
সার্কুলারে বলা হয়, প্রতিটি ব্যাংকের পর্ষদ বিশেষ মনিটরিং সেলের তৈরি ত্রৈমাসিক বিবরণী পর্যালোচনা করে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়াতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।
খেলাপি ঋণ আদায়ের ব্যাপারে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেবে। পর্ষদ নিয়মিতভাবে এর বাস্তবায়নের অগ্রগতি তদারকি করবে এবং এ ব্যাপারে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে।
সম্প্রতি আদালতে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে গত মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ও অকার্যকর ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত।
বাকি ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আদালতের নির্দেশের কারণে খেলাপির তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে ৮০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকের দৃষ্টিতে এসব ঋণ খেলাপি। এ ছাড়া ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে।