প্রকল্পগুলোর নাম ও বাদ দেয়ার কারণ পৃথকভাবে জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন * মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ
ডেস্ক রিপোর্ট: সঠিক সমীক্ষা ছাড়াই হাতে নেয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্থাপনাগুলো সংরক্ষণ প্রকল্প। ফলে এখন বাদ দিতে হচ্ছে ৬৭টি স্কিম (স্থাপনা বা স্তম্ভ তৈরি)। এছাড়া প্রকল্পটির কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতিও নেই।
মেয়াদ শেষ হলেও বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এ অবস্থায় আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোসহ প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। কিন্তু কঠোর অবস্থান নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। বলা হয়েছে, বাদ দেয়া স্কিমগুলোর নাম এবং প্রত্যেকটির জন্য আলাদা করে কারণ জানাতে হবে। ২৭ জুন সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করা হয় কমিশনের পক্ষ থেকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামিমা নার্গিস মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি যখন নেয়া হয়েছিল, তখন এসব স্কিম যুক্ত ছিল। কিন্তু এখন মেয়াদের শেষদিকে এসে কেন এসব বাদ দেয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। শুধু কয়েকটি কারণ দেখালে হবে না। প্রত্যেকটি স্কিমের ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে।
বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে দেখছি। পিইসি সভায় বিভিন্ন সুপারিশ দিয়ে প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে। এখনও সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ফেরত আসেনি।
সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ ও পুনঃনির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। কিন্তু জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ১ লাখ টাকা। সংশোধনী প্রস্তাবে ১৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা কমিয়ে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবায়ন অগ্রগতি কম হওয়ায় এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করার কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৫৬টি জেলার ১৮৮টি উপজেলার ৩৪২টি স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৪৬টি স্তম্ভের কাজ শেষ হয়েছে। ৯৩টির কাজ চলমান রয়েছে এবং ৪৯টি স্থাপনার জন্য ই-জিপিতে দরপত্র কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক এবং এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এজাজ মোর্শেদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি নেয়ার সময় সীমাক্ষা করা হয়নি। তবে মানুষের কাছে শুনে খোঁজখবর নিয়ে তারপরই প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো স্থানে জেলা পরিষদ স্তম্ভ নির্মাণ করেছে, কোথাও স্থানীয়ভাবে স্তম্ভ তৈরি হয়েছে। আবার কোথাও জমি পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে ৬৭টি স্তম্ভ নির্মাণ বাদ এবং নতুন করে ৫টি স্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, জমি না পাওয়ায় টাঙ্গাইলের গোপালপুর এবং গোপালগঞ্জে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ স্কিম বাদ দিতে হচ্ছে। এ রকম অনেক রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, মেরামত ও পুনঃনির্মাণযোগ্য জায়গা ও স্থাপনা না থাকা, দ্বৈততা, ব্যক্তিগত জমিতে বা স্থাপনার কাজে বাধা প্রদান ইত্যাদি কারণে প্রকল্পটি সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে যথাযথভাবে সার্ভে না করেই অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) স্কিমগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়। তাছাড়া ৬৭টি স্কিম বাদ এবং ৫টি স্কিম অন্তর্ভুক্ত করার যে প্রস্তাব, এর যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হয় পিইসি সভায়। পরে স্কিমগুলো বাদ দেয়ার কারণ পৃথকভাবে তালিকা আকারে ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে।সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা এবং দেশপ্রেমের অনুভূতিগুলোকে আরও বাড়িয়ে তোলার জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এছাড়া নির্বাচিত তালিকা মোতাবেক সুনির্দিষ্ট স্থানে স্মৃতিস্থাপনাগুলোর সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের মাধ্যমে অবস্থান অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস পৌঁছানো, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান নির্মিত অবকাঠামোগুলোর পরিধি বর্ধন এবং সহায়ক অঙ্গের মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিকরণই ছিল প্রকল্পটির উদ্দেশ্য।