মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সুরাইয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নিল সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ মাগুরার শিশু সুরাইয়ার প্রতিবন্ধী হয়ে ওঠার খবরের মধ্যে সরকার তার চিকিৎসার ভার নেওয়ার কথা জানিয়েছে। পায়ের জোরও হারাচ্ছে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ সেই সুরাইয়া। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাগুরা শহরতলীর দোয়াপাড়ে সুরাইয়ার বাড়ি গিয়ে জেলা প্রশাসক আলী অকবর একথা জানান।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সময় কেক কেটে সুরাইয়ার জন্মদিনও পালন করা হয়। ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় দোয়াপাড় এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন সাড়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ নাজমা বেগম। এ সময় তার গর্ভে থাকা শিশুটিও গুলিবিদ্ধ হয়। ওই রাতে মাগুরা সদর হাসাপতালে অস্ত্রোপচারে সুরাইয়ার জন্ম হয়।
সুরাইয়ার ডা চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। বাম চোখও নষ্ট হওয়ার পথে। পা দুটিও ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে উঠছে।
জেলা প্রশাসক আলী অকবর ও তার দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তকর্তারা কেক, নতুন পোশাক, খেলনা ও বিভিন্ন খাবার নিয়ে সুরাইয়ার জন্মদিন পালন করেন।
এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের সহযোগিতায় ঢাকায় নিয়ে সুরাইয়ার চিকিৎসাসহ সকল সাহযোগিতার প্রদানের আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক আলী অকবর।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুস সালাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ানসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, চার বছর পূর্ণ হওয়া সুরাইয়া চিকিৎসার অভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের নজরে আসে।
“এ সংবাদের সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় থেকে ফোনে সুরাইয়াকে ঢাকায় এনে যথাযথ চিকিৎসা ও পরিবারটির সার্বিক সহযোগিতা দিতে বলা হয় মাগুরা জেলা প্রশাসনকে।”
এরপর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে তার বাড়ি গিয়ে সুরাইয়া ও তার পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া হয়।
সুরাইয়ার জন্মদিন পালন ও তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসায় সহযোগিতা দেওয়ার খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সুরাইয়ার মা নাজমা বেগম।
নাজমা বেগম বলেন, ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকায় সরকারিভাবে তার ও তার সুরাইয়ার সব ধরনের চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
“কিন্তু মাঝে অর্থিক অনটনের কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার না পেয়ে সুরাইয়ার দুপায়ের শক্তি হারিয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ডান চোঁখটি।
জেলা প্রশাসক নিজে বাসায় এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আবারও সুরাইয়ার চিকিৎসাসহ সকল ভার গ্রহণের কথা বলায় তিনি খুশি। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করেন।
একইসঙ্গে জেলা প্রশাসক ও সাংবাদিকদের প্রতি নাজমা বেগম কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।
স্বজনরা জানান, সুরাইয়ার জন্মের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। দীর্ঘ দেড় মাস ঢাকায় চিকিৎসা চলা অবস্থায় তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ দেশের দায়িত্বশীল অনেকেই তার চিকিৎসা, লেখাপড়াসহ তার পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণের ঘোষণা দেন। কিন্তু বাড়ি ফেরার পরে আর কেউ সুরাইয়ার খোঁজ রাখেনি।