বাবার জীবন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই: ঐন্দ্রিলা

বিনোদন ডেস্ক: দেখতে দেখতে চলে গেল নয়টি বছর। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়ক বুলবুল আহমেদ। তার চলে যাওয়ার দীর্ঘ সময় পার হলেও ‘দেবদাস’খ্যাত এই অভিনেতা এখনও দর্শক-ভক্তদের হৃদয়ে সমুজ্জ্বল।

মৃত্যুবার্ষিকীতে বুলবুল আহমেদকে নিয়ে তার তনয়া ও অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা আহমেদ বাংলানিউজের কাছে স্মৃতিচারণ করেছেন। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘বাবা নেই, নয় বছর হয়ে গেল। এটা মানতে খুব কষ্ট হয়, তবুও প্রকৃতির নিয়ম মেনে নিতে হচ্ছে।’

‘বাবা আমার শিক্ষক ছিলেন। তিনি আমাকে সবকিছু হাতে ধরে শিখিয়েছেন। তার জন্যই আমি অভিনয়ে এসেছি। জ্ঞান হবার আগেই আমি দেড় বছর বয়সে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি। বাবা তার পছন্দের অনেক চরিত্র আমাকে দিয়ে পর্দায় তুলে ধরেছেন। তাছাড়া আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুও ছিলেন বাবা। সকল বিষয়ে তিনি আমাকে দিকনির্দেশনা দিতেন, পরামর্শ দিতেন। যা আমি আজও মেনে চলি,’ যোগ করেন ঐন্দ্রিলা।

বুলবুল আহমেদের বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবন নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন তার ছোট মেয়ে। নির্মাণ করেছেন প্রামাণ্যচিত্র ‘এক জীবন্ত কিংবদন্তির কথা’ এবং লিখেছেন বায়োগ্রাফি ‘একজন মহানায়কের কথা’। এছাড়া তিনি বাবার জীবনী নিয়ে নির্মাণ করতে চান চলচ্চিত্র।

ঐন্দ্রিলার ভাষ্যে, ‘একবার বাবাকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা মাথায় এসেছিল। কারণ তিনি একজন ব্যাংকার থেকে মহানায়ক হয়েছেন, তার জীবন চলচ্চিত্রের মতই ছিল। তাছাড়া বাবার ইচ্ছাতে আমি চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনাও করেছি। তাই ভবিষ্যতে কখনো সুযোগ হলে বাবার জীবনী নিয়ে আমার চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই।’

তিনি আরও জানান, বুলবুল আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পারিবারিকভাবে এতিমখানায় এতিমদের খাওয়ানো, মসজিদে দোয়া মাহফিল ও কোরআন খতমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বুলবুল আহমেদের আসল নাম তবারুক হোসেন। বাবা-মা তাকে আদর করে ডাকতেন বুলবুল নামে। সে নামেই তিনি সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ১৯৪১ সালে পুরান ঢাকার আগামাসি লেনে তার জন্ম। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিক, নটরডেম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই তিনি জড়িত হন গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের পথিকৃৎ ড্রামা সার্কেলের সঙ্গে। ড্রামা সার্কেলের হয়ে মঞ্চে ‘ইডিপাস’ ও ‘আর্মস অ্যান্ড দ্য ম্যান’ নাটকে অভিনয় করেন। ১২ বছর প্রেম করার পর ১৯৬৫ সালে বিয়ে করেন নাট্যাভিনেত্রী ডেইজি আহমেদকে।

মামাতো ভাই অভিনেতা নাজমুল হুদা বাচ্চুর মাধ্যমে ১৯৬৮ সালে টিভি নাটকে অভিনয় শুরু করেন বুলবুল আহমেদ। আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের ‘ইয়ে করে বিয়ে’র মধ্য দিয়ে ১৯৭৩ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় বুলবুল আহমেদের।

চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী এই অভিনেতার উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘সূর্যস্নান’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘মোহনা’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘জীবন নিয়ে জুয়া’, ‘সোহাগ’, ‘অতিথি’, ‘বধূবিদায়’, ‘দেবদাস’, ‘ওয়াদা’, ‘ভালোমানুষ’, ‘মহানায়ক’, ‘রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত’, ‘শুভদা’, ‘শহর থেকে দূরে’, ‘অঙ্গার’ প্রভৃতি। বহু টিভি নাটকেও এই গুণী শিল্পী অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে এইসব দিনরাত্রি, বরফগলা নদী, ইডিয়ট উল্লেখযোগ্য।