নালিশে কী মেলে বিএনপির?

নিজস্ব প্রতিবেদক : মিডিয়ার কাছে কান্নাকাটি, বিদেশিদের কাছে ধর্ণা, অভিযোগের ফাইল বয়ে চলা। মির্জা ফখরুল ইসলাম জনসভায়, রুহুল কবির রিজভী অফিসে, ড. কামাল বিদেশীদের কাছে- আজ এভাবেই বিএনপি অভিযোগ যাত্রার কর্মসূচী সাজিয়েছিল। অনেকে বলে ‘নালিশ পার্টি’। সেই নালিশ পার্টির এখন নেতৃত্বে ড. কামাল। উন্নয়নের বাংলাদেশে এসব কি ধোপে টিকবে?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এ বৈঠক হয়। আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকে বিদেশিদের কাছে নানা অভিযোগ জানানো হয়। বিদেশীদের কাছে এমন অভিযোগ করা বিএনপির জন্য নতুন কিছু নয়। বিদেশে গিয়েও বিদেশীদের কাছে নিয়মিত ধর্না দেয়া হয়। লবিস্ট নিয়োগ করা হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে দলটির কী মেলে?

বিএনপির এমন নালিশ ‘ফর্মূলা’ নিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব এখন কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। এসব কান্নাকাটির আড়ালে আসলে মতলব আছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ধান্দায় আছেন। জনগণ তাঁদের চায় না। তাঁরা জনগণের সঙ্গে একধরনের ধোঁকাবাজির খেলা খেলছেন।’

বিএনপি ‘মোদী এনে দেবে গদি’ এই আশায় মোদীর পায়ে পড়েছিল। সেই দিবাস্বপ্ন ভেঙে গেলে জন কেরী’র নিকট কান্নাকাটি করেছিল। অনেক দেন দরবার করে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাথে খানিক পলক দর্শনের সুযোগ পেয়ে সেটা নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল গিয়েছিল জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করার জন্য গিয়েছিল। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কারো কারো হাব-ভাব দেখে মনে হচ্ছিল মির্জা ফখরুলরা যেন কোনো শীর্ষ বৈঠকে যাচ্ছেন। রাজনীতিতে অভিজ্ঞ লোকজন তখনই বুঝেছিলেন রাজনীতিতে বিএনপির যে অপরিপক্বতা কম বেশি বরাবর ছিল, সেটা লোপ পাওয়ার বদলে আরো যেন খানিকটা বেড়েছে। জাতিসংঘ নিঃসন্দেহে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি সংস্থা। তবে কোনো স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নির্বাচন প্রশ্নে তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করা ছাড়া, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলের অংশগ্রহণ নিয়ে ইতিবাচক প্রত্যাশা করা ছাড়া বিশেষ আর কি করতে পারে? নির্বাচনে বিএনপিকে জয়ী করার আশা তো দিতে পারে না! ক্ষমতায় তো বসিয়ে দিতে পারে না!

রাজনীতি-অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অনেকের ধারণা বিএনপি এমনটাই আশা করেছিল। রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে এখানেই দলটির অপরিক্বতা খানিকটা হলেও ধরা পড়ে।

বিএনপির নিউইয়র্ক মিশন শুধু ব্যর্থ নয়, প্রতিপক্ষের মধ্যে ম্যালা ঠাট্টা ও হাসাহাসির জন্ম দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি জেনারেল ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলতে ছাড়েননি যে বিএনপির নিউইয়র্ক মিশন হতাশা ও অশ্রুপাতে শেষ হয়েছে! এই উক্তির কোনো জবাব বিএনপির কেউ দিতে পেরেছেন বলে জানা নেই। তবুও বিএনপি ছুটছে সেই বিদেশীদের দরজাতেই। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. কামাল হোসেন।

বিএনপি জনগনে বিশ্বাস করে নাকি বিদেশীতে? দেশের নিরীহ মানুষকে পেট্রল দিয়ে হত্যা করে বিদেশীদের কাছে ক্ষমতা ভিক্ষা চাওয়া আর কত? পেট্রল সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস চালিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ক্ষমতা মিলেনি। বিএনপি এ নির্বাচনে তাই আর সেপথে হাটেনি। সেকারণেই জনগণ ছেড়ে বিএনপি এখন বিদেশীদের কাছে গণতন্ত্রের নালিশ করে, গণতন্ত্রের জন্য কান্নাকাটি করে। বিএনপির ‘গণতন্ত্রের’ আড়ালের ইতিহাস কমবেশি সবার জানা। বিএনপির গণতন্ত্র মানে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসরদের প্রতিষ্ঠা করা। আমরা কি এই গণতন্ত্র চাই? নাকি পেট্রল সন্ত্রাস, আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে যারা নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই?