জেলা পরিষদেও বসবে প্রশাসক সংসদে বিল পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: মেয়াদ শেষ হলে জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০২২’ পাস করেছে সংসদ। প্রস্তাবিত আইনে জেলা পরিষদে বিদ্যমান ১৫ জন সাধারণ সদস্যদের স্থলে উপজেলার সমানসংখ্যক সদস্য থাকার বিধান করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গতকাল সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগের বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়।


বিদ্যমান আইনে প্রতি জেলায় ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং পাঁচ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকার বিধান রয়েছে। এটি সংশোধন করে প্রত্যেক উপজেলায় (জেলার মোট উপজেলার সমনসংখ্যক) একজন করে সদস্য এবং চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের মোট সংখ্যার এক- তৃতীয়াংশ (নিকটবর্তী পূর্ণসংখ্যা) ও কমপক্ষে দুই জন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এদিকে বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনকে ভোটার তালিকা তৈরির কথা বলা হলেও পাস হওয়া বিলে নির্বাচন কমিশনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে।
বিলে নতুন উপধারা যুক্ত করে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে পরিষদের সভায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে বলা হয়েছে। তবে তাদের ভোটাধিকার থাকবে না।
বিলে জেলা পরিষদের কার্যক্রম সরকারের নিবিড় পর্যাবেক্ষণে আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের ৩৭ ধারার পর ৩৭ (ক) যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরিষদ প্রতি অর্থবছর শেষে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে সম্পাদিত কার্যাবলীর ওপর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করবে।
বিলে বিদ্যমান আইনের কর্মকর্তাদের পদবির পরিবর্তন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘একজন সচিব’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘সিনিয়র সহকারী সচিব’ পদমর্যাদার একজন নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যবহারের বিধান রাখা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনে কেবল নতুন জেলা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের বিধান থাকলেও চলমান কোনও পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের বিধান নেই। বিলে জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ যুক্ত করা হয়েছে।
বিদ্যমান আইনে ৮২ নম্বর ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে— এতে কোনও জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে এবং পরবর্তী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনও কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসকের মেয়াদ ও অব্যাহতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে।
মন্ত্রীর প্রস্তাব করা বিলে প্রশাসকের মেয়াদ ছিল না। তবে মন্ত্রী একটি সংশোধনী গ্রহণ করায় এখন প্রশাসকের মেয়াদ ১৮০ দিনের বেশি হবে না। একইসঙ্গে একাধিকবার কেউ প্রশাসক থাকতে পারবেন না।
বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যমান আইনে জেলার আয়তন, জনসংখ্যা ও উপজেলার সংখ্যা ইত্যাদি নির্বিশেষে সব জেলা পরিষদে সমসংখ্যক মোট ২১ জন সদস্য রয়েছে। কিন্তু বৃহৎ আয়তনের তুলনায় ক্ষুদ্র আয়তনের জেলা পরিষদগুলোর রাজস্ব আয়ের সংস্থান খুবই কম। ফলে ক্ষুদ্র জেলার পরিষদের পক্ষে সদস্যদের সম্মানী পরিশোধ ও অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ সম্ভব হয় না। এ সমস্যা হতে উত্তরণে প্রত্যেক জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।’