এরশাদই ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমিক’

নিজস্ব প্রতিবেদক : চল্লিশ বছরের বড় একটা মানুষের সঙ্গে প্রেম, বছর পাঁচেকের দাম্পত্য, তারপর বিচ্ছেদ। সেই বিচ্ছেদের অভিজ্ঞতাও বড় তিক্ত; তবু বিদিশা সিদ্দিকের চোখে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদই ‘পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমিক’।

সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের প্রেম নিয়ে গল্পের শেষ নেই। তার সঙ্গে কয়েক বছরের সংসারে কেমন কেটেছে বিদিশার? পরের বছরগুলোই বা কেমন গেছে?

এরশাদের মৃত্যুর পর আলাপচারিতায় বিদিশা বলেছেন মিষ্টি প্রেম আর বিচ্ছেদের কষ্টের কথা।

এরশাদের ‘প্রবল পুত্র স্নেহের’ কাছে হার মেনে ছেলে শাহতা জারাব এরিককে কাছে রাখার অধিকার ছেড়ে দিতে হয়েছিল বিদিশাকে। এখন এরশাদের অবর্তমানে ছেলেকে নিজের কাছে ফিরে পেতে প্রয়োজনে আইনে লড়াইয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এক সময়ের এই ফ্যাশন ডিজাইনার বলেছেন, “আমি ভাত মাছ রান্না করা মেয়ে মানুষ না। লড়াই করেই এ পর্যন্ত এসেছি। আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক কবি আবু বকর সিদ্দিকের মেয়ে বিদিশার বয়স যখন মাত্র ১৪ বছর, ব্রিটিশ নাগরিক পিটার উইসনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি লেখাপড়া করেছেন ইংল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের ওপর ডিগ্রি নিয়ে ঢাকায় ব্যবসাও করেছেন।

১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসায় এক ডিনারে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের সঙ্গে বিদিশার প্রথম দেখা। পরেরবার দেখা হয় ঢাকার ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে; প্রেমের শুরুটা তখনই।

সেই প্রেমের জেরেই পিটার উইসনের সঙ্গে বিদিশার বিচ্ছেদ। লন্ডনে এরশাদের সঙ্গে এনগেইজমেন্ট হয় ১৯৯৯ সালে। পরের বছর ঢাকায় হয় বিয়ে।

কিন্তু সেই সংসার টুটে যায় ২০০৫ সালেই। এরশাদের দেওয়া চুরির মামলায় জেলে যেতে হয় বিদিশাকে।

অবশ্য বিদিশার বিশ্বাস, এরশাদের ওই মামলা আর হেনস্তা ছিল তৎকালীন বিএনপি সরকারের ‘ষড়যন্ত্র’।

তিনি বলেন, “বিএনপি আমলে উনি আমার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটানোর পর রিমান্ডে নেওয়ালেন, জেল খাটালেন। তারপর সন্তান নিয়ে অনেক যুদ্ধ করলাম। পরে আবার সমঝোতাও হলো।

“কিন্তু পরে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আর আলাপ করিনি। যেহেতু তিনি বিষয়গুলো নিয়ে আমার কাছে মাফ চেয়েছেন। আমার কাছে তার লিখিতও আছে। সেখানে বলেছেন যা হয়েছে তা ভুলে যাওয়ার জন্য।”

বিদিশা বলেন, এরশাদ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা হত।

“দুজনে দুই বাড়িতে থাকতাম। এরিক আমার কাছে আসলে ফিরতে দেরি হলে তিনি এসে নিয়ে যেতেন। আমার আগের সন্তানরা লন্ডন থেকে আসলে বলতেন ওদের প্রেসিডেন্ট পার্কে পাঠিয়ে দাও। আমার সাথে দেখা করে যাক। চমৎকার একটা সম্পর্ক ছিলো আমাদের। ”

জাতীয় পার্টির একটি সুবিধাভোগী অংশই তাদের একসাথে থাকতে দেয়নি বলে অনুযোগ বিদিশার।

“তারা সব সময় এরশাদের কানে কথা লাগাতো এবং উত্তেজিত করতো।… পরিবেশ আমাদের একসঙ্গে থাকতে দেয়নি, সংসার করতে পারিনি।

“একটা গ্রুপ, সব সময় তারা চেষ্টা করেছে শেষ দিন পর্যন্ত যাতে আমি তার কাছে না আসতে পারি, তার সেবা না করতে পারি। শেষ সময় পর্যন্ত আমি অনুরোধ করেছি যাতে আমি তার সেবা করতে পারি।”

১৪ জুলাই এরশাদ মারা যাওয়ার পর কাকরাইলে পার্টি অফিসে যখন শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছিল, পাশেই এক জায়গায় গাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে বলে জানালেন বিদিশা।

বললেন, “কাছে যেতে পারিনি; পরিস্থিতি আমার পক্ষে ছিল না।”